Wednesday, 30 January 2019

MEASUREMENTS



বিভিন্ন মাপের একক (Units of different sizes ) :

আমাদের সহজে বোধগম্য হওয়ার জন্য বা সহজে বুঝতে পারার জন্য, ক্ষুদ্র অনুজীব থেকে বৃহৎ জীব, ছোটো থেকে বড়ো বিভিন্ন জাগতিক বস্তুর পরিমাপের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন মানের একক আমরা ব্যবহার করে থাকি । একই ভৌতরাশি পরিমাপে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন মানের একক ব্যবহার করে পরিমাপ সূচক সংখ্যাটিকে সুবিধাজনক ভাবে পাওয়া সম্ভব হয় । ছোটো পরিমাপে ছোটো একক এবং বড়ো পরিমাপে বড়ো একক ব্যবহার করা হয় । যেমন, কলকাতা থেকে দিল্লির দূরত্ব কিলোমিটারে প্রকাশ করলে দূরত্ব সূচক সংখ্যা বুঝতে সুবিধা হয় , কিন্তু ঐ একই দূরত্ব সেন্টিমিটারে প্রকাশ করলে দূরত্ব সূচক সংখ্যা এত বড়ো হয় যে, তা আমাদের পক্ষে সহজে বোধগম্য বা বুঝতে বা প্রকাশ করতে অসুবিধা হয় । অনুরূপে একটি বই-এর দৈর্ঘ্য কিলোমিটারে প্রকাশ না করে সেন্টিমিটারে প্রকাশ করলে আমরা সুবিধাজনক পরিমাপ সংখ্যা পাই ।

আবার কোনো দৌড় প্রতিযোগিতায় কোনো প্রতিযোগী যে সময়ে দৌড়ায় তা সেকেন্ডে প্রকাশ করলে সময় সূচক সংখ্যা আমাদের সহজে বোধগম্য হয়, কিন্তু ওই সময় ঘন্টায় প্রকাশ করলে সময় সূচক সংখ্যা ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ হয় যা আমাদের বুঝতে অত্যন্ত অসুবিধা হয় । অনুরূপে ট্রেনে করে কোলকাতা থেকে দিল্লি যাওয়ার সময় ঘন্টায় প্রকাশ করলে সময় সূচক সংখ্যা সুবিধাজনক হয়, কিন্তু ওই সময় সেকেন্ডে প্রকাশ করলে খুব বড়ো সংখ্যা হয় যা বুঝতে বা প্রকাশ করতে অসুবিধা হয় ।

দৈর্ঘ্যের ছোটো একক (small units of length) :

(i) ফার্মি বা ফেমটোমিটার [Femtometer] (fm) : 10-18 কিলোমিটার বা 10-15  মিটার বা 10-13 সেন্টিমিটার দূরত্বকে 1 ফার্মি বলে ।

পরমাণুর নিউক্লিয়াস বা নিউক্লিয়নের ব্যাসার্ধ বা ব্যাস প্রকাশে এই একক ব্যবহৃত হয় ।

(ii) x –একক [x unit] (xu) : 10-13 মিটার বা 10-11 সেন্টিমিটার দূরত্বকে 1 x –একক বলে ।

পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ব্যাসার্ধ বা ব্যাস এবং অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গ দৈর্ঘ্য প্রকাশে  এই একক ব্যবহৃত হয় ।

(iii) পিকোমিটার [Picometer] (pm) : 10-12 মিটার বা 10-10 সেন্টিমিটার বা 10-15 কিলোমিটার দূরত্বকে 1 পিকোমিটার বলে । পরমাণু বা তার নিউক্লিয়াসের ব্যাস প্রকাশে এই একক ব্যবহৃত হয় ।

(iv) অ্যাংস্ট্রম [Angstrom] (Å ) : 10-13 কিলোমিটার বা 10-10 মিটার বা 10-8 সেন্টিমিটার দূরত্বকে 1 অ্যাংস্ট্রম বলে । সাধারণ আলো বা x-রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রকাশে এই একক ব্যবহৃত হয় ।

(v) ন্যানোমিটার [Nanometer](nm) : 10-12 কিলোমিটার বা 10-9 মিটার বা 10-7 সেন্টিমিটার দূরত্বকে 1 ন্যানোমিটার বলে । সাধারণ আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বা ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির আকার প্রকাশে এই একক ব্যবহার করা হয় ।

(vi) মাইক্রোমিটার বা মাইক্রন [Micrometer or Micron] (µ) : 10-9 কিলোমিটার বা 10-6 মিটার বা 10-4 সেন্টিমিটার দূরত্বকে 1 মাইক্রন বলে । অনুবীক্ষণ যন্ত্রে যেসব বস্তু দেখা যায়, তাদের আকার প্রকাশে এই একক ব্যবহার করা হয় । বাজারে যেসব পলিথিন ব্যাগ ব্যবহৃত হয় তাদের বেধও মাইক্রনে উল্লেখ করা হয় ।

(vii) এটোমিটার [attometer] (am) = 10-21 কিলোমিটার বা 10-18 মিটার বা 10-16 সেন্টিমিটার দূরত্বকে 1 এটোমিটার বলে । এই ক্ষুদ্র দৈর্ঘ্যের এককও বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় ।

দৈর্ঘ্যের বড়ো একক (Big units of length ) :

(i) অ্যাস্ট্রনমিক্যাল একক [Astronomical Unit](AU) : পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে গড় দূরত্বকে 1 অ্যাস্ট্রনমিক্যাল একক বলে ।

1 AU = 1.496 x 108 km বা 1 AU = 1.496 x 1011m বা 1 AU = 1.496 x 1013cm  । পৃথিবী থেকে বিভিন্ন গ্রহ, উপগ্রহ ইত্যাদির দূরত্ব প্রকাশে এই একক ব্যবহৃত হয় ।

(ii) আলোকবর্ষ [Light Year ]: শূন্য মাধ্যমে সেকেন্ডে 3 x 108 মিটার বেগে 1 বছর সময়ে আলো যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে 1 আলোকবর্ষ বলে ।

1 আলোকবর্ষ = 9.467 x 1012 km বা 9.467 x 1015 m বা 9.467 x 1017 cm । বিভিন্ন নক্ষত্রের মধ্যে পারস্পরিক দূরত্ব প্রকাশে এই একক ব্যবহৃত হয় ।

(iii) পারসেক [Parsec]: এটি দৈর্ঘ্যের সবচেয়ে বড়ো একক । জ্যোতির্বিদ্যায় বিভিন্ন দূরবর্তী নক্ষত্রের পারস্পরিক দূরত্ব বা দুটি নক্ষত্রপুঞ্জের পারস্পরিক দূরত্ব প্রকাশে এই একই একক ব্যবহৃত হয় । 1 অ্যাস্ট্রনমিক্যাল একক দৈর্ঘ্যের বৃত্তচাপ বৃত্তের কেন্দ্রে 1 সেকেন্ড কোণ উৎপন্ন করলে ওই বৃত্তের ব্যাসার্ধকে 1 পারসেক বলা হয় ।

1 পারসেক = 3.084 x 1013 km বা 3.084 x 1016 m বা 3.084 x 1018 cm  ।

এছাড়াও বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ডেকামিটার [decameter] (dam) = 10 m, হেক্টোমিটার [hectometer] (hm) = 102 m, কিলোমিটার [kilometer] (km) = 103 m, মেগামিটার [megameter] (Mm) = 106m, গিগামিটার [gigameter] (Gm) = 109m , টেরামিটার [terameter] (Tm) = 1012m , পেটামিটার [petameter] (Pm) =1015m , এক্সামিটার [exameter] (Em) = 1018m  –দৈর্ঘ্যের এই বড়ো একক গুলিও ব্যবহার করা হয় । নক্ষত্রের ব্যাস বা নক্ষত্র পুঞ্জের বিস্তৃতি ইত্যাদি প্রকাশে এই সকল বড়ো এককের ব্যবহার আছে ।

ভরের ছোটো একক (small units of Mass ) :

পারমাণবিক ভর একক [atomic mass unit] (amu/u) : মৌলের একটি পরমাণুর প্রকৃত ভরকে যে এককে প্রকাশ করা হয় সেটিই পারমাণবিক ভর একক । কার্বন (6C12) পরমাণুর ভরের 112112 অংশকে এক পারমাণবিক ভর একক বলা হয় ।

6.022 x 1023  সংখ্যক কার্বন পরমাণু ভর = 12 g

অথএব  একটি কার্বন পরমাণুর ভর = 126.022×1023g126.022×1023g

অথএব 1 u = 112×126.022×1023=1.6605×10−24g112×126.022×1023=1.6605×10−24g
কোনো মৌলের পারমাণবিক ভরকে 1u দিয়ে গুণ করলে মৌলটির একটি পরমাণুর প্রকৃত ভর পাওয়া যায় ।

যেমন, নাইট্রোজেনের পারমাণবিক গুরুত্ব 14 । অতএব নাইট্রোজেনের একটি পরমাণুর প্রকৃত ভর =14 x 1.6605 x 10-24 = 23.247 x 10-24 g

সময়ের ছোটো ও বড়ো একক (small and big units of time ) :

সময়ের ছোটো একক হিসাবে আমরা মিলিসেকেন্ড (ms) এবং মাইক্রোসেকেন্ড (µs) ব্যবহার করে থাকি ।

1 ms = 10-3 s, 1µs = 10-6 s

আবার সময়ের বড়ো একক হিসেবে আমরা ঘন্টা, দিন, সপ্তাহ, মাস, বছর ইত্যাদি ব্যবহার করি ।

আমাদের বয়স আমরা সেকেন্ডে প্রকাশ না করে বছরে প্রকাশ করি —কারণ বয়স সেকেন্ডে প্রকাশ করলে দুটি অসুবিধা হয় । প্রথমত, বয়স সূচক সংখ্যা অত্যন্ত বৃহৎ হয় যা আমাদের সহজে বুঝতে বা প্রকাশ করতে অসুবিধা হয় । দ্বিতীয়ত, বয়স সেকেন্ডে প্রকাশ করলে প্রতি সেকেন্ডে বয়সের মান বাড়তে থাকে এবং সেক্ষেত্রে বয়সের হিসেব রাখা খুবই কষ্টকর হয় । যেমন ধরা যাক কারও বয়স 14 বছর । একে সেকেন্ডে প্রকাশ করলে হবে = 14 x 86400 s = 441504000 s । সেজন্য বয়সকে বছরে প্রকাশ করলে এই দুটি অসুবিধাই দূর করা যায় ।

ভৌতরাশি (Physical Quantity) : দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন বস্তুর গঠন বা বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা লাভের জন্য আমরা কিছু পরিমাপ করে থাকি । যাদের পরিমাপ করতে পারা যায় তাদের ভৌতরাশি বা রাশি বলা হয় । যেমন – ঘরের দৈর্ঘ্য স্কেল বা ফিতে দিয়ে আমরা পরিমাপ করতে পারি, বাড়ি থেকে স্কুলে আসতে যে সময় লাগে তা ঘড়ি দিয়ে আমরা পরিমাপ করতে পারি বা দেহের উষ্ণতা আমরা থার্মোমিটার দিয়ে পরিমাপ করতে পারি । এখানে দৈর্ঘ্য, সময় এবং উষ্ণতা এরা প্রত্যেকেই ভৌতরাশি ।

ভৌতরাশির সংজ্ঞা : যে সমস্ত প্রাকৃতিক বিষয়কে বা ঘটনা সম্পর্কিত যা কিছুকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পরিমাপ করা যায় তাদেরকেই ভৌতরাশি বা প্রাকৃতিক রাশি বলা হয় ।

যেমন :- এক টুকরো কাঠের গঠন সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা করতে হলে আমরা তার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, ভর, আয়তন, ঘনত্ব ইত্যাদির পরিমাপ করে থাকি । এখানে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, ভর, আয়তন, ঘনত্ব এরা প্রত্যেকেই হল ভৌতরাশি ।

আমরা অনেক সময় বলি এই কাঠের টুকরোটির পরিমাপ 2 মিটার বা 3 মিটার । এখানে পরিমাপের উল্লেখ থাকলেও কাঠ নিজে কিন্তু ভৌতরাশি নয় । কারণ কাঠের পরিমাপ বলতে আমরা কাঠের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো ভৌতরাশি যেমন– দৈর্ঘ্য, ভর ইত্যাদির পরিমাপ বুঝি । শুধু কাঠের পরিমাপ বললে নির্দিষ্ট কোনো কিছুর পরিমাপ বোঝায় না । অনুরূপ ভাবে দুধের পরিমাপ বললে তার সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো ভৌতরাশি যেমন আয়তন, ভর, ইত্যাদির পরিমাপ বোঝায় । তাই দুধের পরিমাপ হলেও দুধ ভৌতরাশি নয় ।

ভৌতরাশিকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয় – (i) স্কেলার রাশি এবং (ii) ভেক্টর রাশি ।

স্কেলার রাশি :- যে সকল ভৌতরাশির কেবল মাত্র মান আছে কিন্তু অভিমুখ নেই তাদের স্কেলার রাশি বলে । যেমন -দৈর্ঘ্য, ভর, আয়তন, ঘনত্ব, সময়, প্রবাহমাত্রা, উষ্ণতা ইত্যাদিকে স্কেলার রাশি বলা হয় ।

ভেক্টর রাশি :- যে সকল ভৌতরাশির মান এবং অভিমুখ দুইই বর্তমান তাদের ভেক্টর রাশি বলে ।  যেমন - সরণ, বেগ, ত্বরণ, ভরবেগ, বল ইত্যাদিকে ভেক্টর রাশি বলা হয় ।

এককের ধারণা (Concept of Units) : দৈনন্দিন জীবনে এবং বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক কাজে বিভিন্ন ভৌতরাশি পরিমাপ করতে হয় । কোনো ভৌতরাশিকে পরিমাপ করার প্রয়োজন হলে রাশিটির একটি নির্দিষ্ট পরিমাণকে প্রমাণ ধরে নিয়ে ঐ প্রমাণ পরিমাণটি রাশিটির মধ্যে কতবার আছে দেখে নিয়ে রাশিটির পরিমাপ প্রকাশ করলে তা আমাদের সকলের কাছে একই মানে আসে । ওই প্রমাণ পরিমাণকেই আমরা একক বলি । বিভিন্ন ভৌতরাশির সঠিক পরিমাপ প্রকাশ করতে আমাদের এককের সাহায্য নিতে হয় । উপযুক্ত একক ছাড়া অধিকাংশ ভৌতরাশির পরিমাপ সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারণা জন্মায় না ।

সংজ্ঞা : কোনো ভৌতরাশি পরিমাপ করার ক্ষেত্রে, ওই ভৌত রাশির একটি নির্দিষ্ট এবং সুবিধাজনক মানকে প্রমাণ ধরে, তুলনামূলকভাবে ওই ভৌতরাশির পরিমাপ করা হয় । ওই নির্দিষ্ট মানকে পরিমাপের একক বলা হয় । 

যেমন ধরা যাক কোনো ঘরের দৈর্ঘ্যের পরিমাপ করতে হবে । এখানে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ দৈর্ঘ্যকে ( মিটার বা ফুট ) প্রমাণ ধরে ঐ প্রমাণ দৈর্ঘ্য ঘরের দৈর্ঘ্যে কতবার আছে তা দেখে নিয়ে ঘরের দৈর্ঘ্যকে প্রকাশ করা হয় । এখানে ঐ প্রমাণ দৈর্ঘ্যই একক । এককের পরিমাণ সর্বজন স্বীকৃত হওয়া দরকার । যেমন ‘মিটার’ দৈর্ঘ্য সকলের কাছেই সমান ।

এককের প্রয়োজনীয়তা (Utillity of Units) :  কোনো ভৌতরাশির একক থাকলে এবং তার পরিমাপ প্রকাশের সময় একক উল্লেখ না করলে রাশিটির পরিমাপ সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট ধারণা জন্মায় না ।

(i) যদি বলি ঘরটির দৈর্ঘ্য 10 – এই উক্তি থেকে আমরা ঘরের দৈর্ঘ্য সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ধারণা করতে পারি না । কিন্তু যদি বলা হয় ঘরটির দৈর্ঘ্য 10 মিটার তাহলে আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারি ঘরটি কতটুকু লম্বা । এখানে ভৌতরাশি হল দৈর্ঘ্য । এর পরিমাপ প্রকাশে এখানে মিটার একক ব্যবহার করা হয়েছে । ঘরের দৈর্ঘ্য ঐ এককের 10 গুণ ।

(ii) আবার যদি বলি ‘একটি কাঠের টুকরোর ভর 5’ – এ থেকে টুকরোর ভর সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারণা জন্মায় না । কিন্তু যদি বলা হয় কাঠের টুকরোটির ভর 5 কি.গ্রা. তবেই আমরা সহজে ভর সম্বন্ধে ধারণা করতে পারি । এখানে ভর ভৌতরাশি এবং এর পরিমাপ প্রকাশে ব্যবহৃত একক কি.গ্রা. ।

(iii) অনুরূপভাবে যদি বলি 'এই কাজ করতে 20 সময় লেগেছে' - এ থেকেও সময়ের সঠিক ধারণা জন্মায় না । কিন্তু ওই সময়কে 20 মিনিট বা সেকেন্ড বলা হলে তাহলে আমরা সহজেই বুঝতে পারি কাজটি করতে ঠিক কত সময় লেগেছে । এখানে সময় হল ভৌতরাশি এবং এর পরিমাপ প্রকাশের একক হল মিনিট বা সেকেন্ড ।

উপরের এই আলোচনা থেকে বোঝা গেল যে, কোনো ভৌতরাশির পরিমাপে দুটি অংশ থাকে । প্রথমটি হল ভৌতরাশিটির পরিমাপের মান অর্থাৎ, এককের তুলনায় পরিমাপটি কতগুণ এবং দ্বিতীয় অংশটি হল রাশিটির একক । যেমন উপরের উদাহরণে ঘরের দৈর্ঘ্যের পরিমাপ 10 মিটার এখানে 10 সংখ্যাটি হল দৈর্ঘ্যের পরিমাপের মান যা মিটারের 10 গুণ এবং মিটার হল একক ।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুটি ভিন্ন রাশির একই একক থাকা সম্ভব । যেমন – দুরত্ব ও সরণ, দ্রুতি ও বেগ ইত্যাদি । দুরত্বের নির্দিষ্ট অভিমুখ নেই অর্থাৎ, তা স্কেলার রাশি, কিন্তু সরণের অভিমুখ আছে অর্থাৎ, তা ভেক্টর রাশি । অনুরূপে দ্রুতির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট অভিমুখ না থাকলেও বেগের ক্ষেত্রে তা বর্তমান ।

:01
         
এককের বিভিন্ন পদ্ধতি (Different systems of Units) :  বর্তমানে প্রধানত দুটি পদ্ধতিতে সকল ভৌতরাশির একক প্রকাশ করা হয়ে থাকে । যথা – (i) সেন্টিমিটার গ্রাম সেকেন্ড বা cgs পদ্ধতি (cgs system) , (ii) আন্তর্জাতিক পদ্ধতি বা SI পদ্ধতি ( system de International or SI system )

(i) সেন্টিমিটার গ্রাম সেকেন্ড বা cgs পদ্ধতি (cgs system) :- এই পদ্ধতি অনুসারে কেবল মাত্র দৈর্ঘ্য, ভর এবং সময় এই তিনটি ভৌতরাশির একককেই মূল একক ধরা হয় ।

(ii) আন্তর্জাতিক পদ্ধতি বা SI পদ্ধতি ( system de International or SI system ) :- পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভৌতরাশির পরিমাপ প্রকাশে অভিন্নতা আনার জন্য 1960 সালে সর্বজনগ্রাহ্য একটি পদ্ধতির প্রচলন করা হয় । একেই আন্তর্জাতিক বা SI পদ্ধতি বলা হয় । বর্তমানে এই পদ্ধতিটির ব্যবহার বহুল । এই পদ্ধতি অনুসারে দৈর্ঘ্য, ভর, এবং সময়ের এককের সঙ্গে উষ্ণতা, তড়িৎপ্রবাহ মাত্রা, দীপনপ্রাবল্য, পদার্থের পরিমাণ এদের একককেও মূল একক ধরা হয় ।

এককের বিভিন্ন পদ্ধতিতে বিভিন্ন ভৌতরাশির একক (Units of different quantities in different systems ) :  cgs পদ্ধতিতে দৈর্ঘ্যের একক সেন্টিমিটার (cm), ভরের একক গ্রাম (g) এবং সময়ের একক সেকেন্ড (s) ধরা হয় ।










এছাড়া কোণের একক রেডিয়ান (c) এবং ঘনকোণের একক স্টেরেডিয়ান (sd) – কেও মূল একক ধরা হয় । cgs এবং SI এই দুটি পদ্ধতিকে একত্রে মেট্রিক বা দশমিক পদ্ধতি বলা হয় । এই দুটি পদ্ধতিতে যে-কোনো একক থেকে ছোটো বা বড়ো এককে যেতে হলে দশমিক বিন্দুকে প্রয়োজনমত ডান দিকে বা বাম দিকে সরালেই চলে ।

সকল ভৌতরাশির একক হয় না কারণ কোনো কোনো ভৌতরাশির পরিমাপ প্রকাশে এককের প্রয়োজন হয় না । যে সকল ভৌতরাশি দুটি সমজাতীয় ভৌতরাশির অনুপাত হিসাবে প্রকাশিত হয় তাদের একক থাকে না । যেমন – পারমাণবিক বা আণবিক গুরুত্ব । এরা দুটি ভরের অনুপাত হওয়ায় এককগুলি কেটে যায় । অনুরূপে আপেক্ষিক গুরুত্ব (দুটি ঘনত্বের অনুপাত), আপেক্ষিক আর্দ্রতা (দুটি ভরের অনুপাত), স্থিতিস্থাপক বিকৃতি (দুটি দৈর্ঘ্য বা আয়তনের অনুপাত), যন্ত্রের যান্ত্রিক সুবিধা (দুটি বলের অনুপাত) – এদের কোনো একক নেই ।

মৌলিক এবং লব্ধ একক (Fundamental and derived units) : বিজ্ঞানে অসংখ্য ভৌতরাশি আছে যাদের একক বর্তমান । রাশি অসংখ্য হলেও এদের পরিমাপের একক মাত্র অল্প সংখ্যক রাশির এককের উপযুক্ত সমন্বয়ে গঠন করা সম্ভব । একক দু’প্রকার –

(i) মৌলিক একক বা প্রাথমিক একক (Fundamental units) এবং (ii) লব্ধ একক (Derived units)।

মৌলিক একক বা প্রাথমিক একক (Fundamental units) :- যে সমস্ত ভৌত রাশির একক পরস্পরের উপর নির্ভরশীল নয়, অর্থাৎ স্বাধীনভাবে গঠন করা হয়েছে এবং যাদের সাহায্যে অন্যান্য ভৌত রাশির একক গঠন করা যায় সেই সমস্ত ভৌত রাশির এককগুলিকে মৌলিক একক বা প্রাথমিক একক বলা হয় । যেমন – দৈর্ঘ্যের একক (মি), ভরের একক (কিগ্রা) ইত্যাদি । যে সকল রাশির একক মৌলিক তাদের ‘মৌলিক রাশি’ বলে । ভর, দৈর্ঘ্য ও সময় মৌলিক রাশি ।

লব্ধ একক (Derived units) :- যে সমত ভৌত রাশির একক, এক বা একাধিক (সমজাতীয় বা ভিন্ন জাতীয়) মৌলিক এককের সাহায্য নিয়ে গঠিত হয়, সেই সমস্ত ভৌত রাশির এককগুলিকে লব্ধ একক বলা হয় । যেমন- ক্ষেত্রফলের একক (বর্গ সেমি), বেগের একক (কিমি / ঘন্টা) ইত্যাদি । যে সকল রাশির একক লব্ধ একক তাদের লব্ধ রাশি বলে । ক্ষেত্রফল, বেগ এগুলি লব্ধ রাশি ।

একটি মৌলিক একককে একবার ব্যবহার করেও লব্ধ একক পাওয়া যেতে পারে । যেমন, সময়ের একক সেকেন্ড (s) । এটি মৌলিক একক । আবার কম্পাঙ্কের একক হার্ৎজ (s-1 ) । এটি লব্ধ একক ।

একই মৌলিক একককে একাধিক ব্যবহার করে লব্ধ একক পাওয়া যায় । যেমন, ক্ষেত্রফলের একক (m2) এবং আয়তনের একক (m3) । ক্ষেত্রফলের এককে দুটি দৈর্ঘ্যের এককের এবং এবং আয়তনের এককে তিনটি দৈর্ঘ্যের এককের সমন্বয় ঘটেছে ।

ভিন্ন মৌলিক এককের সমন্বয়ে গঠিত লব্ধ এককের উদাহরণ হল বেগের একক (ms-1), ভরবেগের একক (kgms-1) ইত্যাদি । বেগের এককে দৈর্ঘ্যের একক (m) এবং সময়ের একক (s) –এর সমন্বয় ঘটেছে । ভরবেগের এককে ভরের একক (kg), দৈর্ঘ্যের একক (m) এবং সময়ের একক (s)- এর সমন্বয় ঘটেছে ।





















■ প্রমাণ দৈর্ঘ্য ও প্রমাণ সময়ের আধুনিক ধারণা (Modern concept of standard length and standard time) : SI পদ্ধতিতে দৈর্ঘ্যের একক হল মিটার ।

আধুনিক সংজ্ঞা : 1967 সালে গৃহীত সংজ্ঞা 86 ভরসংখ্যা বিশিষ্ট ক্রিপটন (Kr86) গ্যাস উদ্দীপ্ত অবস্থায় শূন্য মাধ্যমে কমলা-লাল বর্ণের যে আলো বিকিরণ করে ওই আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের (তরঙ্গের গতিপথে পরপর দুটি সমদশা অর্থাৎ একই রকম গতির অবস্থা যুক্ত বিন্দুর মধ্যবর্তী দুরত্ব ) 1650763.75 গুণ দৈর্ঘ্যকে 1 মিটার দৈর্ঘ্য ধরা হয় ।

1983 সালে গৃহীত সংজ্ঞা শূন্য মাধ্যমে 12.9979×10812.9979×108 সেকেন্ড সময়ে আলো যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে 1 মিটার ধরা হয় ।

মিটারের ভগ্নাংশ বা গুণিতাংশ ব্যবহার করে ছোটো বা বড়ো দৈর্ঘ্যের একক পাওয়া যায় ।

SI পদ্ধতিতে সময়ের একক সেকেন্ড ।

আধুনিক সংজ্ঞা : প্রমাণ চৌম্বকক্ষেত্রে অবস্থিত তেজষ্ক্রিয় সিজিয়াম (Cs133) পরমাণুর 9, 192, 631, 770 সংখ্যক পূর্ণ অভ্যন্তরীণ স্পন্দনের (রৈখিক পথে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে যে গতির পুনরাবৃত্তি ঘটে) জন্য প্রয়োজনীয় সময়কে 1 সেকেন্ড ধরা হয় ।

সেকেন্ডর ভগ্নাংশ বা গুণিতাংশ ব্যবহার করে ছোটো বা বড়ো সময়ের একক পাওয়া যায় ।

■ ভরের একক (units of Mass) : কোনো বস্তুতে উপস্থিত জড় পদার্থের পরিমাণকে তার ভর বলা হয় । cgs পদ্ধতিতে ভরের একক গ্রাম (g) এবং SI পদ্ধতিতে ভরের একক কিলোগ্রাম (kg) ।

কিলোগ্রাম : ফ্রান্সের প্যারিস শহরে 'আন্তর্জাতিক ব্যুরো অফ ওয়েটস অ্যান্ড মেজার্স' -এর দপ্তরে রাখা প্ল্যাটিনাম ও ইরিডিয়াম সংকর ধাতুর তৈরি একটি নিরেট চোঙের ভরকে 1 কিলোগ্রাম (kg) ধরা হয় ।

গ্রাম : এক কিলোগ্রামের এক হাজার ভাগের এক ভাগকে 1 গ্রাম বলে । আবার 4°C উষ্ণতায় 1 ঘন সেন্টিমিটার আয়তনের বিশুদ্ধ জলের ভরকেও 1 গ্রাম বলা হয় ।

কিলোগ্রামের ভগ্নাংশ বা গুণিতাংশ ব্যবহার করে অনেক ছোটো বা বড়ো ভরের একক পাওয়া যায় ।

■ আয়তনের একক (Units of Volume) : কোনো বস্তু যে পরিমাণ স্থান দখল করে থাকে সেটাই তার আয়তন । cgs পদ্ধতিতে আয়তনের একক হল ঘন সেন্টিমিটার (cm3) এবং SI পদ্ধতিতে আয়তনের একক হল ঘনমিটার (m3) ।

■ ঘন সেন্টিমিটার : 1 সেন্টিমিটার বাহু বিশিষ্ট কোনো ঘনকের আয়তনকে 1 ঘন সেন্টিমিটার বলে ।

■ ঘন মিটার : 1 মিটার বাহু বিশিষ্ট কোনো ঘনকের আয়তনকে 1 ঘন মিটার বলে ।

ঘনমিটার ও ঘন সেন্টিমিটারের মধ্যে সম্পর্ক :

1 ঘন মিটার = 1 মিটার x 1 মিটার x 1 মিটার

                 = 102 সেমি x 102 সেমি x 102 সেমি

                 = 106 ঘন সেন্টিমিটার

1m3=(100cm)3=106cm31m3=(100cm)3=106cm3
এছাড়া তরলের বা গ্যাসের আয়তন প্রকাশে আমরা লিটার (l), মিলিলিটার (ml) একক ব্যবহার করে থাকি ।

লিটার :  4°C বা 277K উষ্ণতায় 1 কিলোগ্রাম বিশুদ্ধ জলের আয়তনকে 1 লিটার বলা হয় ।

মিলিলিটার : 1 লিটারের এক হাজার ভাগের এক ভাগকে 1 মিলিলিটার বলে । আবার, 4°C উষ্ণতায় 1g ভরের বিশুদ্ধ জলের আয়তনকে 1 মিলিলিটার বলা হয় ।

■ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক :

   1 লিটার = 1000 মিলিলিটার

               = 1000 ঘন সেন্টিমিটার             (∵∵ 1 মিলিলিটার = 1 ঘন সেন্টিমিটার )

               = 1 ঘন ডেসিমিটার                   (∵∵ 1 ডেসিমিটার = 10 সেন্টিমিটার )

               =1100011000 ঘনমিটার     (∵∵ 1 মিটার = 10 ডেসিমিটার )

অর্থাৎ, 1 ঘনমিটার (m3) = 1000 লিটার (l) ।

1l=1dm3=(10cm)3=1000cm31l=1dm3=(10cm)3=1000cm3
লিটারের সংজ্ঞায় 4°C উষ্ণতা বা 277 K উষ্ণতার উল্লেখ করা হয়— কারণ সাধারণত তরলের উষ্ণতা বৃদ্ধি করলে আয়তন বাড়ে ও ঘনত্ব কমে । কিন্তু জলের ক্ষেত্রে 0°C থেকে 4°C উষ্ণতা পর্যন্ত এই নিয়মের ব্যতিক্রম লক্ষ করা যায় । 0°C থেকে জলের উষ্ণতা বৃদ্ধি করতে থাকলে জলের আয়তন হ্রাস পায় ও ঘনত্ব বাড়ে । 4°C উষ্ণতা পর্যন্ত আয়তন কমতে থাকে ও ঘনত্ব বাড়তে থাকে । 4°C উষ্ণতায় জলের ঘনত্ব হয় সর্বাধিক এবং এর মান হয় 1 g/cm3 । 4°C -এর পরে উষ্ণতা বাড়াতে থাকলে জলের আয়তন বাড়ে ও ঘনত্ব কমে । অর্থাৎ 4°C উষ্ণতায় 1000 g বা 1 kg বিশুদ্ধ জলের আয়তন হয় 1000 cm3  বা 1 L । লিটার একটি নির্দিষ্ট আয়তন । তাই ওই নির্দিষ্ট আয়তন বোঝাতে লিটারের সংজ্ঞায় নির্দিষ্ট উষ্ণতা 4°C বা 277 K উষ্ণতার উল্লেখ করা হয় ।

4°C উষ্ণতায় জলের ঘনত্ব সর্বোচ্চ অর্থাৎ, 1 gcm-3 বা 1000 kgm-3 । উষ্ণতা এর বেশি বা কম হলে ঘনত্ব কমে যায় এবং ভগ্নাংশ হয় । ফলে হিসেবে অসুবিধা ঘটে । তাই ওই উষ্ণতাকেই নির্দিষ্ট করা হয় ।


মাত্রা (Dimensions)

কোনো ভৌতরাশিতে (Physical quantities) মূল রাশিগুলি কীভাবে উপস্থিত থাকে তা ওই রাশির মাত্রা (Dimensions) নির্ধারণ করে ।

সংজ্ঞা : কোনো ভৌতরাশিতে (Physical quantities) গুণ বা ভাগের মাধ্যমে উপস্থিত বিভিন্ন মৌলিক রাশিগুলির চিহ্নের উপযুক্ত ঘাত সমন্বিত সাংকেতিক রাশিমালাকে ওই ভৌতরাশির মাত্রা (Dimensions) বলে ।

সকল ভৌতরাশির মাত্রা সাধারণত দৈর্ঘ্যের চিহ্ন [L], ভরের চিহ্ন [M] এবং সময়ের চিহ্ন [T] দ্বারা প্রকাশ করা হয় । [ভৌতরাশি] বললে ওই ভৌতরাশির মাত্রা বোঝায় ।

মাত্রীয় সংকেত : মাত্রার সাহায্যে কোনো ভৌতরাশিকে প্রকাশ করলে তাকে ওই ভৌতরাশির মাত্রীয় সংকেত বলে ।

কয়েকটি ভৌতরাশির মাত্রীয় সংকেত (Dimensional Formulae of some physical quantities) :

(i) [ক্ষেত্রফল] = [দৈর্ঘ্য] x [প্রস্থ] = [দৈর্ঘ্য2 ] = [L2]

    Area=[L]×[L]=[L2]Area=[L]×[L]=[L2]
(ii) [আয়তন] = [দৈর্ঘ্য3] = [L3]

     Volume=length×length×length=[L3]Volume=length×length×length=[L3]
(iii) [ঘনত্ব] = [ভর] / [আয়তন] = [M][L3]=[ML−3][M][L3]=[ML−3]
     Density=massvolume=ML3=[L3]Density=massvolume=ML3=[L3]
(iv) [বেগ] = [সরণ] / [সময়] = [L][T]=[LT−1][L][T]=[LT−1]
     Velocity=distancetime=[L][T]=[LT−1]Velocity=distancetime=[L][T]=[LT−1]
(v) [ত্বরণ] = [বেগ] / [সময়] = [LT−1][T]=[LT−2][LT−1][T]=[LT−2]
     Acceleration=velocitytime=[LT−1][T]=[LT−2]Acceleration=velocitytime=[LT−1][T]=[LT−2]
(vi) [ভরবেগ] = [ভর] x [বেগ] = [M] x [LT-1] = [MLT-1]

(vii) [বল] = [ভর] x [ত্বরণ] = [M] x [LT-2] = [MLT-2]

       Force=mass×acceleration=[M][L][T−2]=[MLT−2]Force=mass×acceleration=[M][L][T−2]=[MLT−2]
(viii)  [কার্য] = [বল] x [সরণ] = [MLT-2] x [L] = [ML2T-2]

        Work=Force×distance=[MLT−2]×[L]=[ML2T−2]Work=Force×distance=[MLT−2]×[L]=[ML2T−2]
(ix) [ক্ষমতা] = [কার্য] / [সময়] = $[ML2T−2][T]=[ML2T−3]$[ML2T−2][T]=[ML2T−3]         

      Power=worktime=[ML2T−2][T]=[ML2T−3]Power=worktime=[ML2T−2][T]=[ML2T−3]
(x) [চাপ] = [বল] / [ক্ষেত্রফল] = [MLT−2][L2]=[ML−1T−2][MLT−2][L2]=[ML−1T−2]   

     Pressure=Forcearea=[MLT−2][L2]=[ML−1T−2]Pressure=Forcearea=[MLT−2][L2]=[ML−1T−2]
কোনো ভৌতরাশির মাত্রীয় সংকেত জানা থাকলে সহজেই রাশিটির একক লেখা সম্ভব । যেমন, আয়তনের মাত্রীয় সংকেত [L3] হওয়ায় এর SI একক মিটার3 (m3) বা ঘনমিটার । অনুরূপে বেগের মাত্রীয় সংকেত [LT-1] হওয়ায় এর SI একক মিটার/সেকেন্ড (ms-1) ।

এককহীন ভৌতরাশির মাত্রা থাকে না । এদের মাত্রীয় সংকেতকে [M0L0T0] এরূপ লেখা যায় । তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মাত্রা ছাড়াও একক থাকতে পারে । যেমন রেডিয়ান এককে প্রকাশিত কোণের মাত্রা নেই ।

মাত্রীয় সমীকরণ (Dimensional Equation) : কোনো ভৌতরাশির মাত্রাকে মৌলিক রাশিগুলির মাত্রার সঙ্গে সমন্বিত করে যে সমীকরণের আকারে প্রকাশ করা হয় তাকে ওই ভৌতরাশির মাত্রীয় সমীকরণ বলে । যেমন, কোনো ভৌতরাশি X-এর মাত্রীয় সমীকরণ [X] = [MaLbTc] যেখানে, a, b, এবং c যথাক্রমে ভর, দৈর্ঘ্য ও সময়ের ঘাত নির্দেশ করে ।

মাত্রীয় সমীকরণের সাহায্যে —

(i) এক পদ্ধতির একক থেকে অন্য পদ্ধতির এককে যাওয়া যায়,

(ii) সমীকরণের সত্যতা প্রমাণ করা যায় ।

(iii) কোনো সমীকরণে ধ্রুবক বা চলরাশির মাত্রা নির্ধারণ করা যায় ।

20N বলকে ডাইন প্রকাশ করো ।

বলের মাত্রীয় সমীকরণ [F] = [MLT-2] ; নিউটন ও ডাইন এককে বলের মান n1 এবং n2 হলে,

n2=n1[M1M2][L1L2][T1T2]2=20[Kgg][mcm][ss]2=20×1000×100×1=2×106n2=n1[M1M2][L1L2][T1T2]2=20[Kgg][mcm][ss]2=20×1000×100×1=2×106 dyne   

► সরল দোলকের দোলনকালে T = 2π1g−−√2π1g সমীকরণটির সত্যতা যাচাই করো । (I = কার্যকর দৈর্ঘ্য, g = অভিকর্ষজ ত্বরণ ) ।

বামদিকের মাত্রা = [T], ডানদিকের মাত্রা [1g−−√]=[LLT−2]12=[T2]12=[T][1g]=[LLT−2]12=[T2]12=[T]
দুইদিকের মাত্রা একই হওয়ায় সমীকরণটি সঠিক ।

ভৌতরাশির দৈর্ঘ্য পরিমাপে সাধারণ রৈখিক স্কেলের ব্যবহার :-

বিভিন্ন ভৌতরাশির [Physical quantity] দৈর্ঘ্য পরিমাপের জন্য ব্যবহারিক জীবনে আমরা যে সমস্ত যন্ত্র ব্যবহার করি তার মধ্যে সাধারণ রৈখিক স্কেল (Ordiary linear scale) হল অন্যতম ।






সাধারণ রৈখিক স্কেল (Ordiary linear scale ) : দৈর্ঘ্য পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রকে রৈখিক স্কেল বলা হয় । স্কেল সাধারণত প্লাস্টিক, কাঠ বা ধাতুর তৈরি হয় এবং এর দৈর্ঘ্য বরাবর একধারে মিলিমিটার ও সেন্টিমিটারে এবং ওপর ধারে ইঞ্চি ও তার ভগ্নাংশে দাগ কাটা থাকে ।

সাধারণ স্কেলের ব্যবহার : স্কেলটিকে রেখাংশের উপর এমন ভাবে বসাতে হবে যেন স্কেলের দাগ কাটা ধার রেখাংশের সঙ্গে সমাপতিত হয় । রেখাংশের বাম প্রান্তকে স্কেলের নির্দিষ্ট দাগের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়ে ডান প্রান্তে স্কেলের সঙ্গে লম্বভাবে তাকিয়ে পাঠ নেওয়া হয় । দুই প্রান্তের পাঠের ব্যবধানই রেখাংশটির দৈর্ঘ্য ।

সাধারণ স্কেলে দৈর্ঘ্য পরিমাপের সীমা : আমরা যে সব স্কেল ব্যবহার করি তা মিলিমিটারে অংশাঙ্কিত ধারে ক্ষুদ্রতম এক ঘর 1 মিলিমিটার এবং ইঞ্চিতে অংশাঙ্কিত ধারে ক্ষুদ্রতম এক ঘর 0.1 ইঞ্চি হয় । তাই এই ন্যূনতম 1 মিলিমিটার বা 0.1 ইঞ্চি দৈর্ঘ্য সঠিক ভাবে পরিমাপ করা যায় । 1 ফুট দৈর্ঘ্যের স্কেলে, স্কেলের একধারে 30 সেমি এবং অপরধারে 12 ইঞ্চি পর্যন্ত দাগ কাটা থাকে বলে সর্বোচ্চ ওই দৈর্ঘ্য মাপা সম্ভব ।

সাধারণ রৈখিক স্কেলে দৈর্ঘ্য পরিমাপে ত্রুটি : সাধারণ স্কেলে দৈর্ঘ্য পরিমাপে বিভিন্ন ত্রুটি গুলি হল –

(1) চোখের আন্দাজ জনিত ত্রুটি : দৈর্ঘ্য পরিমাপের সময় বামদিকের পাঠ নির্দিষ্ট দাগে বসলেও ডানদিকের পাঠ নির্দিষ্ট দাগে নাও মিলতে পারে । সেক্ষত্রে ডানদিকের পাঠ চোখের আন্দাজে ঠিক করতে হয় । ফলে পাঠে যে ত্রুটি আসে তাকেই চোখের আন্দাজ জনিত ত্রুটি বলা হয় । সাধারণ স্কেলে এই ত্রুটির সম্ভাবনা থেকেই যায় ।

(2) যান্ত্রিক ত্রুটি  : স্কেলের ক্ষুদ্রতম ঘর গুলি সমান সমান ফাঁক বিশিষ্টি না হলে এই ত্রুটি আসে ।  এরূপ স্কেলের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে দৈর্ঘ্য মেপে গড় নিলে এই ত্রুটি যথা সম্ভব কমানো যায় ।

(3)  লম্বন ত্রুটি : স্কেলের পাঠ নেওয়ার সময় আমাদের দৃষ্টি রেখাকে স্কেলের সঙ্গে লম্বভাবে না রেখে তীর্যকভাবে রাখা হলে পাঠে যে ত্রুটি থাকে  তাকে লম্বন ত্রুটি বলে । পাঠ নেওয়ার বিন্দুতে দৃষ্টি রেখাকে লম্বভাবে স্থাপন করলে এই ত্রুটি দূর করা সম্ভব হয় ।

উষ্ণতার পরিবর্তনে ধাতব দন্ডের প্রসারণ বা সংকোচন কাঠের বা প্লাস্টিক দন্ডের প্রসারণ বা সংকোচনের তুলনায় অনেক বেশি । সেজন্য সাধারণ স্কেল ধাতুর না করে প্লাস্টিক বা কাঠের করাই শ্রেয় । ধাতুর স্কেলে পরিমিত দৈর্ঘ্য শীতকালে এবং গ্রীষ্মকালে ভিন্ন হবে অর্থাৎ, পরিমাপে ত্রুটি থাকার সম্ভাবনা থাকে ।

রৈখিক স্কেলের সাহায্যে বক্ররেখার দৈর্ঘ্য পরিমাপ : একটি লম্বা সুতো নিয়ে রেখাটির সঙ্গে মিলিয়ে তার উপর রাখতে হবে এবং রেখাটির দুপ্রান্তকে সুতোয় চিহ্নিত করতে হবে । এরপর সুতোটিকে টানটান করে ধরে চিহ্নিত দাগ দুটির মাঝের দূরত্ব স্কেলের সাহায্যে মেপে নিলে বক্ররেখার সঠিক দৈর্ঘ্য মাপা যায় ।

রৈখিক স্কেলের সাহায্যে পাতলা কাগজের বেধ পরিমাপ : একটি বড়ো পাতলা কাগজ নিয়ে অনেকবার ভাঁজ করে নিতে হবে । এবার ভাঁজ করা মোটা অংশটির বেধ স্কেল দিয়ে মেপে নিতে হবে । প্রাপ্ত বেধ কে ভাঁজ সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলেই পাতলা কাগজের বেধ জানা যায় । যদি n সংখ্যক ভাঁজের মোট বেধ d হয় তবে পাতলা কাগজটির বেধ = d/n ।

গ্রাফ পেপারের সাহায্যে অসম আকৃতির পাত বা ফলকের ক্ষেত্রফল নির্ণয় (Determination of area of an irregular plate or slab with the help of graph paper ) :

অসম আকৃতির পাত বা ফলকের ক্ষেত্রফল কোনো গাণিতিক সূত্র ব্যবহার করে পরিমাপ করা যায় না । এই সমস্ত ক্ষেত্রে গ্রাফ পেপারের সাহায্য নেওয়া হয় । মিলিমিটার গ্রাফ পেপারের প্রতিটি ঘরের (বর্গক্ষেত্রের ) ক্ষেত্রফল 1 বর্গমিলিমিটার (1mm2) । এরূপ একটি গ্রাফ পেপার নিয়ে তার উপরে অসম আকৃতির পাত বা ফলকটিকে বসানো হয় । এরপর পাতটির পরিসীমাকে পেনসিলের সাহায্যে গ্রাফ পেপারের উপর রেখা টেনে নেওয়া হ্যয় । এবার পাতটিকে তুলে নিয়ে চিহ্নিত পরিসীমার মধ্যে বর্গক্ষেত্রের সংখ্যা গুণে নেওয়া হয় ।  গোনার সময় কোনো বর্গক্ষেত্রের অর্ধেকের বেশি সীমার মধ্যে থাকলে একে পূর্ণ বর্গক্ষেত্র ধরা  হয় । আবার বর্গক্ষেত্রের অর্ধেকের কম সীমার মধ্যে থাকলে একে বাদ দেওয়া হয় । দুটি অর্ধেক বর্গক্ষেত্র সীমার মধ্যে থাকলে দুটি মিলে একটি বর্গক্ষেত্র ধরা হয় । এইভাবে প্রাপ্ত মোট বর্গক্ষেত্রের সংখ্যাকে বর্গমিলিমিটারে প্রকাশ করলে অসম আকৃতির পাতটির ক্ষেত্রফল পাওয়া যায় ।

একটি মিলিমিটার গ্রাফ পেপারের সাহায্যে অসম আকৃতির পাত বা ফলকের ক্ষেত্রফল কীভাবে নির্ণয় করা যেতে পারে ?

ABCDEFGA হল একটা অসম আকৃতির পাত বা ফলক । মিলিমিটার গ্রাফ পেপারের সাহায্যে যার ক্ষেত্রফল নির্ণয় করতে হবে । মিলিমিটার গ্রাফ পেপারের ক্ষুদ্রতম প্রতিটি ঘরের দৈর্ঘ্য হল 1 mm । এতএব ক্ষুদ্রতম প্রতিটি ঘরের ক্ষেত্রফল 1 mm2 ।





এখন ABCDEFGA অসম আকৃতির পাত বা ফলকটিকে একটি মিলিমিটার গ্রাফ পেপারের ওপর রাখা হল । বস্তুটির চারপাশ দিয়ে একটি রেখা টানা হল । এবার বস্তুটিকে পেপারের ওপর থেকে সরিয়ে নেওয়া হল । আঁকা লাইনের মধ্যে মোট ক-টা পূর্ণ এবং কতগুলো ভাঙ্গা ঘর আছে —তা গুণে নেওয়া হল । এই ঘরগুলির মধ্যে যেগুলি মোটামুটি অর্ধেকের কম অংশ লাইনের ভিতরে আছে সেগুলির ক্ষেত্রফল 14×1mm214×1mm2 বা 14mm214mm2, যেগুলি মোটামুটি অর্ধেক অংশ লাইনের ভিতরে আছে সেগুলির ক্ষেত্রফল 12×1mm212×1mm2 বা 12mm212mm2 এবং যেগুলি মোটামুটি অর্ধেকের বেশি অংশ লাইনের ভিতরে আছে সেগুলির ক্ষেত্রফল 34×1mm234×1mm2 বা 34mm234mm2 করে ধরে মোট ক্ষেত্রফল বার করা হয় ।

ধরা যাক পূর্ণ ঘরগুলির সংখ্যা a, 1414 অংশ ঘরগুলির সংখ্যা b, 1212 অংশ ঘরগুলির সংখ্যা c, এবং 3434 অংশ ঘরগুলির সংখ্যা d ।

এতএব নির্ণেয় ক্ষেত্রফল = (a+b/4+c/2+3d/4)mm²



আয়তন মাপক চোঙ (Measuring cylinder) :  তরল পদার্থের আয়তন পরিমাপের জন্য মাপক চোঙ ব্যবহার করা হয় । এটি একটি সম প্রস্থচ্ছেদ বিশিষ্ট একদিক বদ্ধ লম্বা কাঁচের চোঙ । এই চোঙের বাইরের গায়ে cm3 বা ml (মিলিলিটার) এককে আয়তন নির্দেশক দাগ কাটা থাকে । প্রতি cm3 কে 5 বা 10 টি সমান ভাগে ভাগ করা থাকে ।
কোনো তরলের আয়তন পরিমাপের সময় চোঙটিকে খাড়া ভাবে বসিয়ে তরলটিকে এর মধ্যে ঢালা হয় এবং তরলের ওপর তলের অবতল পৃষ্ঠের সর্বনিম্ন বিন্দু এবং পারদের ক্ষেত্রে উত্তল পৃষ্ঠের সর্বোচ্চ বিন্দু স্কেলে কোন দাগের সঙ্গে মেলে তা দেখে নেওয়া হয় । এটিই তরলটির আয়তন । পাঠ নেবার সময় যেন লম্বন ত্রুটি (parallax error) না আসে সেটা খেয়াল রাখা দরকার ।


মাপক চোঙ-এর সাহায্যে অসম আকৃতির বস্তুর আয়তন নির্ণয় : মাপক চোঙের সাহায্যে অসম আকৃতির বস্তুর আয়তন নির্ণয় করা সম্ভব । এ ক্ষেত্রে এমন একটি তরলের সাহায্য নিতে হয় যা বস্তুটিকে দ্রবীভূত করে না, বস্তুটির সঙ্গে বিক্রিয়া ঘটায় না এবং যার মধ্যে বস্তুটি ডুবে যায় এবং এমন একটি মাপক চোঙ নেওয়া দরকার যার ভিতরের আয়তন বস্তুটির আয়তনের তুলনায় চার-পাঁচ গুণ এবং যার প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল এমন যাতে বস্তুটিকে মাপক চোঙের মধ্যে সহজেই প্রবেশ করানো যায় ।
মাপক চোঙটিকে আংশিক তরল ভর্তি করা হল এবং লম্বন ত্রুটি (parallax error) দূর করে তরল তলের পাঠ নেওয়া হল । ধরা যাক এই অবস্থায় তরলের আয়তন V1 cm3 । এর পর পরীক্ষাধীন বস্তুটিকে সুতোর সাহায্যে বেঁধে তরলে সম্পূর্ণ ভাবে ডোবানো হল । বৃদ্ধি প্রাপ্ত তরল তলের পাঠ নেওয়া হল এখন ধরা যাক বস্তু সমেত তরলের আয়তন V2 cm3 । বস্তুটির আয়তন = (V2 - V1) cm3 । এই পাঠ থেকে নিমজ্জিত সুতোর আয়তন বাদ দিলে বস্তুর প্রকৃত আয়তন পাওয়া যাবে ।

আয়তন মাপক চোঙের সাহায্যে জল অপেক্ষা হালকা অদ্রাব্য একটি অসম আকৃতির বস্তুর আয়তন পরিমাপ :- জলের তুলনায় হালকা কোনো অসম বস্তুর আয়তন নির্ণয় করতে গেলে নিমজ্জকের সাহায্য নিতে হয় । নিমজ্জক ও বস্তুর মিলিত আয়তন মেপে নিমজ্জকের আয়তন বাদ দিলে বস্তুর আয়তন জানা যায় । আয়তন মাপক চোঙটি অর্ধেক পরিমাণ জল দ্বারা ভর্তি করা হল ।
এরপর একটি ভারী লোহার বা পাথরের টুকরো (নিমজ্জক) সুতোয় বেঁধে ওই জলে ডুবিয়ে দেওয়া হল । এর ফলে জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি পেল । চোঙের গায়ে অংশাঙ্কন থেকে ওই অপসারিত জলের আয়তন নির্ণয় করা হল । এই আয়তন হল নিমজ্জকের আয়তন (V1) । এরপর যে অসম আকৃতির বস্তুটির আয়তন পরিমাপ করতে হবে সেটিকে ওই নিমজ্জকটির সঙ্গে সুতো দিয়ে বেঁধে আবার জলে সম্পূর্ণ ডুবিয়ে দেওয়া হল । এর ফলে অপসারিত জলের আয়তন পরিমাপ করা হল । এই আয়তন হল বস্তু ও নিমজ্জকের মিলিত আয়তন (V2) । এতএব বস্তুর আয়তন = v2 - V1 ।

মাপক চোঙের মধ্যে ঢুকবে না — এরূপ পাথরের টুকরোর আয়তন নির্ণয় :
পাথরের টুকরোটি প্রবেশ করানো যাবে এমন প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল বিশিষ্ট পার্শ্বনল যুক্ত একটি কাঁচের চোঙ নেওয়া হল । চোঙটিতে জল ঢালা হতে থাকলে এক সময় পার্শ্বনল দিয়ে জল বেরিয়ে যেতে থাকবে ।
জল ঢালা বন্ধ করে দিলে জলের লেভেল পার্শ্বনলের তল পর্যন্ত থাকে । পার্শ্বনলটির ঠিক নীচে মাপনী চোঙটিকে রাখা হল । এবার একটি মোম লাগানো সরু, শক্ত সুতোতে পাথরটিকে বেঁধে খুব ধীরে চোঙের জলে ডোবানো হল । পাথরটি সম-আয়তন জল অপসারণ করবে তাই ওই পরিমাণ জল পার্শ্বনল দিয়ে গিয়ে মাপনী চোঙে জমা হবে । মাপনী চোঙে জমা হওয়া জলের আয়তনই হল পাথরের টুকরোটির আয়তন । এই পাঠ থেকে নিমজ্জিত সুতোর আয়তন বাদ দিলে বস্তুর প্রকৃত আয়তন পাওয়া যাবে ।

সাধারণ তুলা যন্ত্র (Common Balance) : সাধারণ তুলাযন্ত্রের সাহায্যে কোনো বস্তুর ভর পরিমাপ করা হয় । মুদির দোকানে পণ্য-সামগ্রী মাপার জন্য যে দাঁড়িপাল্লা ব্যবহার করা হয়ে থাকে সেগুলিই সাধারণ তুলাযন্ত্রের উদাহরণ । বর্তমানে অবশ্য ইলেক্ট্রনিক মাপ যন্ত্রের ব্যবহার ক্রমশঃ বৃদ্ধি হচ্ছে ।

সাধারণ তুলা যন্ত্রের ভর পরিমাপের নীতি : তুলাযন্ত্রকে নির্ভুল করে বাম দিকের তুলাপাত্রে পরিমেয় বস্তু এবং ডানদিকের তুলাপাত্রে প্রয়োজনীয়   বাটখারা রাখা হয় । AB তুলাদণ্ডের A ও B বিন্দুতে বস্তু ও বাটখারার ওজন ক্রিয়াশীল, আর O হল তুলাদণ্ডের আলম্ব ।
তুলাদণ্ড অনুভূমিক হলে বলবিদ্যার সূত্রানুসারে বস্তুর ওজন x AO = বাটখারার ওজন x BO । যেহেতু AO = BO, এতএব বস্তুর ওজন = বাটখারার ওজন । অর্থাৎ, বস্তুর ভর = বাটখারার ভর । বাটখারার ওপর লেখা ওজন সংখ্যা পাঠ করে বস্তুর ওজন প্রকাশ করা হয় ।

ভালো তুলাযন্ত্রের বৈশিষ্ট্য সমূহ :

(1) তুলাযন্ত্রটি সুবেদী হবে অর্থাৎ, তুলাযন্ত্রটি দুই তুলা পাত্রে রাখা ভরের সূক্ষ্ম পার্থক্য নির্দেশ করতে সমর্থ হবে । তুলাযন্ত্রকে সুবেদী করা যায় –

(a) তুলাদন্ডকে লম্বা ও হালকা করে ।

(b) তুলা পাত্র গুলিকে হালকা করে ।

(c) তুলাদন্ডের আলম্ব ও ভারকেন্দ্রের মধ্যে দূরত্ব কম করে এবং

(d) সূচক লম্বা করে ।

(2) তুলাযন্ত্রটি নির্ভুল হবে অর্থাৎ, তুলাপাত্র দুটি খালি থাকা অবস্থায় তুলাদন্ডটি অনুভূমিক হবে ।

(3) তুলাযন্ত্রটি সুস্থিত হবে অর্থাৎ, ভর পরিমাপের সময়, তুলাদন্ড দুলতে শুরু করলে দ্রুত স্থির হবে ।

(4) তুলাযন্ত্রটি দৃঢ় হবে অর্থাৎ, যন্ত্রের বিভিন্ন অংশ মজবুত হবে ।

সাধারণ তুলাযন্ত্রে ভর পরিমাপের জন্য একটি আলাদা বাক্সে বাটখারা রাখা থাকে । বাটখারা গুলির ভর 1 : 2 : 2 : 5 এই অনুপাতে রাখা হয় । ফলে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে যে-কোনো ভর সবচেয়ে কম সংখ্যক বাটখারা ব্যবহার করে পরিমাপ করা সম্ভব হয় ।













ঘড়ি (Clock) : ঘড়ির সাহায্যে সময় এবং সময়ের ব্যবধান পরিমাপ করা হয় । প্রাচীনকালে সূর্য ঘড়ি, বালি ঘড়ি, জল ঘড়ি ইত্যাদি ব্যবহার করা হত । বর্তমানে সময় পরিমাপের জন্য দেয়াল ঘড়ি (wall clock), পকেট ঘড়ি (pocket watch), হাত ঘড়ি (wrist watch), ডিজিটাল ঘড়ি (digital clock), টেবিল ঘড়ি (table clock) ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় । ক্ষুদ্র সময়ের ব্যবধান পরিমাপে স্টপ ক্লক (stop clock), স্টপ ওয়াচ  (stop watch) এবং খুব ক্ষুদ্র সময়ের ব্যবধান পরিমাপে ক্রোনোমিটার (chronometer) ও মেট্রোনাম (metronome) ঘড়ি ব্যবহার করা হয় ।

স্টপ ওয়াচ ( Stop Watch): এই ঘড়ির সাহায্যে ক্ষুদ্র সময়ের ব্যবধান ( 1515 বা 110110 সেকেন্ড ) সঠিক ভাবে পরিমাপ করা যায় । এতে একটি সেকেন্ডের কাঁটা এবং একটি মিনিটের কাঁটা থাকে । ঘড়ির চাবিকে প্রথমবার টিপলে ঘড়ি চলতে শুরু করে । দ্বিতীয় বার টিপলে কাঁটা থেমে যায় এবং সময় নির্দেশিত হয় । চাবি তৃতীয় বার টিপলে কাঁটা শূন্য দাগে ফিরে আসে । এই ঘড়ি সাধারণত খেলার মাঠে কোনো প্রতিযোগীর দৌড়ের সময় নির্দেশ করতে এবং পরীক্ষাগারে ব্যবহার করা হয় ।

একটি আয়তন মাপক চোঙ ও স্টপ ওয়াচের সাহায্যে কল থেকে জল পড়ার হার নির্ণয় : একটি আয়তন মাপক চোঙ ও স্টপ ওয়াচের সাহায্যে কল থেকে জল পড়ার হার নির্ণয় করা যায় । একটি খালি ও শুষ্ক আয়তন মাপক চোঙ নিয়ে কলের নীচে ধরা হল এবং নির্দিষ্ট সময় ধরে কল থেকে জল চোঙে সংগ্রহ করা হল । সংগ্রহের সময় স্টপ ওয়াচে দেখে নেওয়া হল । সংগৃহীত জলের আয়তন চোঙের স্কেল থেকে দেখে নেওয়া হল । প্রাপ্ত জলের আয়তনকে দেখে নেওয়া সময় দিয়ে ভাগ করলেই জলপ্রবাহের হার জানা যায় । যদি এক্ষেত্রে t1 সময়ে সংগৃহীত জলের আয়তন = V1 হয়, তবে কল থেকে জল পড়ার হার = V1/t1 ।

এই ভাবে বেশ কয়েকবার পাঠ নিয়ে তার গড় করলে জল পড়ার হারের কম ত্রুটিযুক্ত মন পাওয়া যাবে । জলের আয়তন cm3 এককে ও সময় s এককে নিলে জল পড়ার হারের একক হবে cm3/s ।

পরিমাপ সংক্রান্ত গাণিতিক উদাহরণ (Methematical Example):-



























































































No comments:

Post a Comment