☼ তাপের স্বরূপ [Nature of Heat]:-
সাধারণ ভাবে তাপের সংজ্ঞা দেওয়া যায় : যে প্রাকৃতিক কারণে ঠান্ডা ও গরমের অনুভূতি জাগে তাকে তাপ বলে । তাপ বলতে এমন কিছু বোঝায় যা গ্রহণ করলে কোনো বস্তু গরম হয় এবং বর্জন করলে ঠান্ডা হয় । তাপের কোনো আকার, আয়তন, ভর, গন্ধ বা বর্ণ নেই । অতএব তাপ জড় পদার্থ নয় ।
☼ তাপ এক ধরনের শক্তি [Heat is a form of energy]:- বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, কোনো-না-কোনো শক্তির বিনিময়ে তাপ সৃষ্টি হয় । শক্তির অবিনাশিতা সূত্র অনুযায়ী বলা যায় যে, তাপ সৃষ্টির জন্য যে শক্তি ব্যয়িত হয় সেই শক্তি নষ্ট না হয়ে তাপে রুপান্তরিত হয় । এই জন্য তাপকে এক প্রকার শক্তি বলে গণ্য করা হয় ।
☼ সংজ্ঞা [Definition]:- তাপ হল এক প্রকার শক্তি যা গ্রহণ করলে সাধারণভাবে বস্তু উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং বর্জন করলে ঠান্ডা হয়ে যায় । তাপ বা তাপশক্তির মাত্র = [ML2T2]
☼ উষ্ণতা বা তাপমাত্রা [Temperature]:- উষ্ণতা বা তাপমাত্রা হল বস্তুর তাপীয় অবস্থা । এই অবস্থাই স্থির করে দেয় যে, একটি বস্তুকে অন্য কোনো বস্তুর সংস্পর্শে রাখলে, প্রথম বস্তুটি দ্বিতীয় বস্তুকে তাপ দেবে কিংবা দ্বিতীয় বস্তু থেকে তাপ গ্রহণ করবে ।
► উষ্ণতার পরিমাপ [Measurement of Temperature]:-
তাপের প্রভাবে পদার্থের অনেক ভৌত গুণাবলীর পরিবর্তন হয় । যেমন— কঠিন, তরল ও গ্যাসের আয়তন প্রসারণ, পরিবাহীর রোধের পরিবর্তন ইত্যাদি । উষ্ণতার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পদার্থের এই সমস্ত ভৌত গুণাবলীর নিয়মিত পরিবর্তনকে কাজে লাগিয়ে উষ্ণতার পরিমাপ করা হয় । এই রকম পদার্থকে উষ্ণতা মাপক পদার্থ বলে । যে যন্ত্রের সাহায্যে কোনো বস্তুর উষ্ণতা সুক্ষ্ম ও নির্ভুলভাবে মাপা যায় তাকে তাপমান যন্ত্র বা থার্মোমিটার [Thermometer] বলে ।
যে থার্মোমিটারে উষ্ণতা মাপক পদার্থ হিসাবে পারদ ব্যবহৃত হয় তাকে পারদ থার্মোমিটার বলে । এই থার্মোমিটারে পারদের আয়তন প্রসারণ দ্বারা উষ্ণতা মাপা হয় ।
• পারদ থার্মোমিটারের গঠন :- পারদ থার্মোমিটার একটি সর্বত্র সমান ব্যাসের সুক্ষ্ম ছিদ্রবিশিষ্ট শক্ত কাচের নল । ছিদ্রের একপ্রান্তে চোঙাকৃতি একটি বালব আছে এবং অপর প্রান্ত বন্ধ । বালব এবং ছিদ্রের কিছু অংশ পারদপূর্ণ । উষ্ণতা মাপার জন্য কাচনলের গায়ে উষ্ণতার স্কেল আঁকা আছে । যে বস্তুর উষ্ণতা মাপা হয় তার সঙ্গে বালবটির সংস্পর্শ ঘটালে, পারদ আয়তনে বেড়ে স্কেলের যে দাগ পর্যন্ত পৌঁছায় সেটিই হবে বস্তুর উষ্ণতা ।
• ডাক্তারি থার্মোমিটার:- ডাক্তারি থার্মোমিটারে কুন্ডের উপরে ছিদ্রপথ একটু বাঁকানো থাকে, এটি গাঁটের মতো কাজ করে ।
• সুবেদী থার্মোমিটারের বৈশিষ্ট্য :-
[১] কুন্ডের আয়তন বেশি হওয়া দরকার ।
[২] নলের ছিদ্র খুব সরু হওয়া প্রয়োজন ।
[৩] উচ্চ আয়তন-প্রসারণযুক্ত তরল ব্যবহার করতে হবে ।
► থার্মোমিটার স্কেল [Thermometric Scale]:- উষ্ণতা মাপার স্কেল তৈরি করার জন্য দুটি নির্দিষ্ট উষ্ণতা স্থির ধরে নেওয়া হয় । এই উষ্ণতা দুটিকে স্থিরাঙ্ক বলে ।
• নিম্ন-স্থিরাঙ্ক [Lower fixed point]:- প্রমাণ বায়ুমন্ডলীয় চাপে যে উষ্ণতায় বিশুদ্ধ বরফ গলে জলে পরিণত হয় অথবা বিশুদ্ধ জল জমে বরফে পরিণত হয় তাকে নিম্ন-স্থিরাঙ্ক বা হিমাঙ্ক [ice point] বা বরফ বিন্দু [freezing point] বলে ।
• ঊর্ধ্ব-স্থিরাঙ্ক [Upper fixed point]:- প্রমাণ বায়ুমন্ডলীয় চাপে যে উষ্ণতায় বিশুদ্ধ জল স্টীমে পরিণত হয় তাকে ঊর্ধ্ব-স্থিরাঙ্ক বা স্ফুটনাঙ্ক [Boiling point] বা স্টীম বিন্দু [steam point] বলে ।
• প্রাথমিক অন্তর [Fundamental interval]:- থার্মোমিটারের নিম্ন-স্থিরাঙ্ক ও ঊর্ধ্ব-স্থিরাঙ্ক দুটির মধ্যবর্তী উষ্ণতার ব্যবধানকে বলা হয় প্রাথমিক অন্তর । এই ব্যবধানকে কয়েকটি সমান অংশে ভাগ করে বিভিন্ন থার্মোমিটার স্কেল তৈরি করা হয় । প্রত্যেক অংশকে ডিগ্রি বলে । আমাদের দেশে সাধারণত দুই রকমের থার্মোমিটার স্কেল চালু আছে ,যথা— [a] সেলসিয়াস স্কেল ও [b] ফারেনহাইট স্কেল ।
[a] সেলসিয়াস স্কেল [Celsius Scale]:- সেলসিয়াসকে আগে সেন্টিগ্রেড বলা হত । এই স্কেলে নিম্ন-স্থিরাঙ্ককে 0oC এবং ঊর্ধ্ব-স্থিরাঙ্ককে 100oC ধরে মাঝখানের অংশকে সমান 100 ভাগে ভাগ করা হয় । প্রতি ভাগকে বলা হয় এক ডিগ্রি সেলসিয়াস (oC) । অ্যানডার্স সেলসিয়াস [Celsius] নামে সুইডেনের একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী 1742 খ্রিস্টাব্দে এই স্কেল উদ্ভাবন করেন ।
[b] ফারেনহাইট স্কেল [Farenheit Scale]:- এই স্কেলে নিম্ন-স্থিরাঙ্ককে 32oF এবং ঊর্ধ্ব-স্থিরাঙ্ককে 212oF ধরে মাঝখানের অংশকে সমান 180 ভাগে ভাগ করা হয় । প্রতি ভাগকে বলা হয় এক ডিগ্রি ফারেনহাইট (oF) । জি.ডি. ফারেনহাইট নামে একজন বিজ্ঞানী 1720 খ্রিস্টাব্দে এই স্কেল উদ্ভাবন করেন ।
► সেলসিয়াস ও ফারেনহাইট স্কেলের সম্পর্ক :-
সেলসিয়াস ও ফারেনহাইট স্কেলের নিম্ন-স্থিরাঙ্ক ও ঊর্ধ্ব-স্থিরাঙ্কের মধ্যবর্তী উষ্ণতার ব্যবধানকে অর্থাৎ, প্রাথমিক অন্তরকে যথাক্রমে সমান 100 এবং 180 ভাগে ভাগ করা হয়েছে । সুতরাং বলা যায়,
সেলসিয়াস স্কেলের 100 ঘর = ফারেনহাইট স্কেলের 180 ঘর ।
অতএব, সেলসিয়াস স্কেলের 1 ঘর = ফারেনহাইট স্কেলের9595ঘর ।
আবার ধরা যাক, একই উষ্ণতায় সেলসিয়াস স্কেলে পাঠ C এবং ফারেনহাইট স্কেলে পাঠ F । সেলসিয়াস স্কেলের হিমাঙ্ক 0oC এবং ফারেনহাইট স্কেলের হিমাঙ্ক 32oF হওয়ায়, উভয়ক্ষেত্রে প্রাথমিক অন্তরের যথাক্রমেC−0100C−0100এবংF−32180F−32180ভাগ পারদস্তম্ভ উপরে উঠবে,
অর্থাৎ, বলা যায়C−0100=F−32180C−0100=F−32180, যেহেতু উভয়ক্ষেত্রে পারদস্তম্ভের উচ্চতা একই ।
অথবা,C5=F−329C5=F−329এটিই হল সেলসিয়াস ও ফারেনহাইট স্কেলের সম্পর্ক ।
►বিকল্প রূপ:
C=59(F−32)C=59(F−32)বা(C+40)=59(F−32)+40(C+40)=59(F−32)+40
বা(C+40)=59(F−32)+59×72=59(F−32+72)=59(F+40)(C+40)=59(F−32)+59×72=59(F−32+72)=59(F+40)
∴(C+40)=59(F+40)
♦ গাণিতিক উদাহরণ
1. কোন উষ্ণতায় সেলসিয়াস ও ফারেনহাইট স্কেলের পাঠ একই হবে ?
Ans: মনে করি, নির্ণেয় উষ্ণতা = x∘x∘, অতএব, C=F=x∘C=F=x∘
আমরা জানি,C5=F−329C5=F−329বাx5=x−329x5=x−329
বা, 9x=5x−5×329x=5x−5×32বা,4x=−1604x=−160বা,x=−40x=−40
∴∴−40∘C=−40∘F−40∘C=−40∘F
2. কোন উষ্ণতায় ফারেনহাইট স্কেলের পাঠ সেলসিয়াস স্কেলের পাঠের 5 গুণ হবে ?
Ans: মনে করি, সেলসিয়াস স্কেলের পাঠ =x∘x∘
তাহলে, ফারেনহাইট স্কেলের পাঠ =5x∘5x∘
আমরা জানি,C5=F−329C5=F−329বাx5=5x−329x5=5x−329
বা, 9x=25x−1609x=25x−160বা,16x=16016x=160বা,x=10∘x=10∘
∴ফারেনহাইট স্কেলের পাঠ হবে5×10∘=50∘
► তাপ পরিমাপের একক [Unit of measurement of heat]:-
☼ ক্যালোরি [Calorie]:- 1 গ্রাম বিশুদ্ধ জলের উষ্ণতা 1oC বৃদ্ধি করতে যে পরিমাণ তাপ প্রয়োজন হয় তাকে 1 ক্যালোরি বলে । CGS পদ্ধতিতে তাপের একক হল ক্যালোরি ।
☼ জুল [joule]:- SI পদ্ধতিতে তাপের একক শক্তির এককে প্রকাশ করা হয় । SI পদ্ধতিতে তাপের পরিমাপের একক হল জুল । 1 ক্যালোরি = 4.1825 জুল = 4.2 জুল (প্রায়) ।
► তাপের পরিমাপ নির্ণায়ক বিষয়সমূহ [Factors determining the quantities of heat]:-
কোনো বস্তুর তাপের পরিমাণ বস্তুর ভর, উষ্ণতা এবং প্রকৃতির ওপর নির্ভে করে ।
• ভরের উপর নির্ভরশীলতা:- একই পরিমাণ উষ্ণতা বৃদ্ধি বা হ্রাসের জন্য একই পদার্থের বিভিন্ন ভরের বস্তু বিভিন্ন পরিমাণ তাপ গ্রহণ কিংবা বর্জন করে । এই গৃহীত বা বর্জিত তাপ বস্তুর ভরের সমানুপাতিক ।
• উষ্ণতার উপর নির্ভরশীলতা:- নির্দিষ্ট ভরের কোনো বস্তু কর্তৃক গৃহীত বা বর্জিত তাপ উষ্ণতা বৃদ্ধি বা হ্রাসের সমানুপাতিক ।
• বস্তুর প্রকৃতির উপর নির্ভরশীলতা:- কোনো বস্তু কর্তৃক গৃহীত বা বর্জিত তাপের পরিমাণ বস্তুর শুধু ভর বা উষ্ণতার পার্থক্য ছাড়াও আর একটি বিশেষ ধর্ম অর্থাৎ, বস্তুটি যে পদার্থের তৈরি তার প্রকৃতির ওপরেও নির্ভর করে । পদার্থের এই বিশেষ ধর্মকে তার আপেক্ষিক তাপ বলে । যেমন— একই ভরের জল ও দুধের একই রকম দুটি পাত্রে নিয়ে একই উনুনের ওপর বসিয়ে উত্তপ্ত করলে (অর্থাৎ, একই হারে তাপ প্রদান করলে) দুধের চেয়ে জলের আপেক্ষিক তাপ বেশি হওয়ায়, জলের চেয়ে দুধের উষ্ণতা বৃদ্ধি বেশি হয় ।
◘ জলের আপেক্ষিক তাপ অন্যান্য তরলের চেয়ে বেশি হওয়ায়, এর তাপগ্রহণ ও তাপধারণ ক্ষমতা বেশি । তাই সেঁক দেওয়ার কাজে জল বেশি উপযোগী ।
► আপেক্ষিক তাপ [Specific heat]:-
• সংজ্ঞা :- কোনো পদার্থের একক ভরের উষ্ণতা এক ডিগ্রি বৃদ্ধি করতে যে পরিমাণ তাপের প্রয়োজন হয়, তাকে ওই পদার্থের আপেক্ষিক তাপ বলে ।
[ক] CGS পদ্ধতিতে আপেক্ষিক তাপের সংজ্ঞা:- এক গ্রাম ভরের কোনো পদার্থের উষ্ণতা 1oC বাড়াতে যত ক্যালোরি তাপের প্রয়োজন হয়, তাকে ওই পদার্থের আপেক্ষিক তাপ বলে । এই পদ্ধতিতে আপেক্ষিক তাপের একক হল ক্যালোরি প্রতি গ্রাম প্রতি ডিগ্রি সেলসিয়াস (cal/gmoC) ।
'তামার আপেক্ষিক তাপ 0.09 ক্যালোরি/গ্রাম ডিগ্রি সেলসিয়াস' —বলতে এই বোঝায় যে, এক গ্রাম তামার উষ্ণতা 1oC বৃদ্ধি করতে 0.09 ক্যালোরি তাপের প্রয়োজন হয় ।
[খ] SI পদ্ধতিতে আপেক্ষিক তাপের সংজ্ঞা:- এক কিলোগ্রাম ভরের কোনো পদার্থের উষ্ণতা এক কেলভিন বা 1oC বৃদ্ধি করতে যে পরিমাণ তাপশক্তির প্রয়োজন হয়, তাকে ওই পদার্থের আপেক্ষিক তাপ বলে । এর একক হল— জুল/কেজি কেলভিন বা ডিগ্রি সেলসিয়াস (J/kg K বা, J/kg oC) । আপেক্ষিক তাপের মাত্রা = [ML2T-2/MK] = [L2T-2K-1]
'লোহার আপেক্ষিক তাপ 462 J/kgK' বলতে এই বোঝায় যে 1কেজি লোহার উষ্ণতা 1K বৃদ্ধি করতে 462 জুল তাপশক্তির প্রয়োজন । জলের আপেক্ষিক তাপ সবচেয়ে বেশি । CGS পদ্ধতিতে জলের আপেক্ষিক তাপ = 1 cal/gmoC এবং SI পদ্ধতিতে জলের আপেক্ষিক তাপ = 4200 J/kgK ।
► ক্যালোরিমিতির মূলনীতি [Principle of Calorimetry]:-
ভিন্ন উষ্ণতার দুটি বস্তুকে পরস্পরের সংস্পর্শে রাখলে তাপীয় সাম্যাবস্থায় আসার জন্য তাদের মধ্যে তাপের আদান-প্রদান হয় । উষ্ণ বস্তুটি তাপ বর্জন করতে থাকে এবং শীতল বস্তুটি তাপ গ্রহণ করতে থাকে । তাপের এই গ্রহণ ও বর্জন চলতে থাকবে যতক্ষণ না উভয়ের উষ্ণতা সমান হয় । যদি মনে করা যায় যে, গ্রহণ ও বর্জনের সময় কোনো তাপ নষ্ট হয় নি, তবে উষ্ণ বস্তু যে পরিমাণ তাপ বর্জন করবে শীতল বস্তু ঠিক সেই পরিমাণ তাপ গ্রহণ করে । অর্থাৎ, উষ্ণ বস্তু কর্তৃক বর্জিত তাপ = শীতল বস্তু কর্তৃক গৃহীত তাপ । এটি ক্যালোরিমিতির মূলনীতি । এই শর্ত দুই বা তার বেশি বস্তু পরস্পরের সংস্পর্শে এলেও তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে ।
• সতর্কতা :-
[১] তাপের গ্রহণ ও বর্জনের সময় কোনো তাপ নষ্ট হবে না বা বাইরে থেকে কোনো তাপ ভিতরে প্রবেশ করবে না ।
[২] বস্তু দ্বয়ের মধ্যে কোনোরূপ রাসায়নিক বিক্রিয়া হবে না কিংবা একটি অন্যটির মধ্যে দ্রবীভূত না হয় । কারণ প্রত্যেক রাসায়নিক ক্রিয়াতে অথবা দ্রবণে কিছু তাপ পরিত্যক্ত বা শোষিত হয় যা ক্যালোরিমিতির হিসাবে ধরা যাবে না ।
► বস্তুর উষ্ণতা বৃদ্ধি বা হ্রাসের জন্য বস্তু দ্বারা গৃহীত বা বর্জিত তাপের পরিমাণ :-
মনে করি কোনো বস্তুর ভর = m গ্রাম, আপেক্ষিক তাপ = s, তাহলে আপেক্ষিক তাপের সংজ্ঞানুযায়ী CGS পদ্ধতিতে—
1 গ্রাম বস্তুর 1oC উষ্ণতা বৃদ্ধি বা হ্রাসের জন্য গৃহীত বা বর্জিত তাপ = s ক্যালোরি
m গ্রাম বস্তুর 1oC উষ্ণতা বৃদ্ধি বা হ্রাসের জন্য গৃহীত বা বর্জিত তাপ = ms ক্যালোরি
সুতরাং, m গ্রাম বস্তুর toC উষ্ণতা বৃদ্ধি বা হ্রাসের জন্য গৃহীত বা বর্জিত তাপ = mst ক্যালোরি
অতএব, গৃহীত বা বর্জিত তাপ H = mst ক্যালোরি ।
অর্থাৎ, গৃহীত বা বর্জিত তাপ = বস্তুর ভর x আপেক্ষিক তাপ x উষ্ণতা বৃদ্ধি বা হ্রাস ।
SI পদ্ধতি : বস্তুর ভর = m kg, আপেক্ষিক তাপ = s J/kgK এবং উষ্ণতা বৃদ্ধি বা হ্রাস = TK হলে, বস্তু কর্তৃক গৃহীত বা বর্জিত তাপ H = msT জুল (joule) ।
► বস্তুর তাপগ্রাহিতা বা তাপধারকত্ব [Thermal capacity of a body]:-
• সংজ্ঞা:- কোনো বস্তুর উষ্ণতা 1 কেলভিন বা 1oC বৃদ্ধির জন্য যে পরিমাণ তাপের প্রয়োজন, তাকে ওই বস্তুর তাপগ্রাহিতা বা তাপধারকত্ব বলে ।
[ক] CGS পদ্ধতিতে:- বস্তুর তাপগ্রাহিতা C = ms ক্যালোরি /oC, যেখানে বস্তুর ভর = m গ্রাম এবং আপেক্ষিক তাপ = s cal/gmoC ।
[খ] SI পদ্ধতিতে :- বস্তুর তাপগ্রাহিতা C = ms জুল/কেলভিন (J/K), যেখানে বস্তুর ভর = m কেজি এবং আপেক্ষিক তাপ = s J/kgK । তাপগ্রাহিতার মাত্রা = [ML2T-2K-1]
► বস্তুর জলসম [Water equivalent of a body]:-
• সংজ্ঞা:-
কোনো বস্তুর উষ্ণতা 1 কেলভিন বা 1oC বৃদ্ধির জন্য যে পরিমাণ তাপ লাগে, সেই পরিমাণ তাপ দিয়ে যত পরিমাণ জলের উষ্ণতা 1 কেলভিন বা 1oC বৃদ্ধি করা যায়, সেই পরিমাণ জলকে ওই বস্তুর জলসম বলে ।
[ক] CGS পদ্ধতিতে, বস্তুর জলসম W = ms গ্রাম ।
[খ] SI পদ্ধতিতে, বস্তুর জলসমW=ms4200W=ms4200কেজি ।
► তাপগ্রাহিতা ও জলসমের পার্থক্য :-
[১] তাপগ্রাহিতা ও জলসমের সংখ্যাগত মান একই । তাপগ্রাহিতা = জলসম = ভর x আপেক্ষিক তাপ ।
[২] কোনো বস্তুর তাপগ্রাহিতা কিছু পরিমাণ তাপকে বোঝায়; কোনো বস্তুর জলসম কিছু পরিমাণ জলকে বোঝায় ।
[৩] CGS এবং SI পদ্ধতিতে তাপগ্রাহিতার একক যথাক্রমে cal/oC এবং J/K, জলসমের একক যথাক্রমে গ্রাম এবং কেজি ।
♦ গাণিতিক উদাহরণ ♦
1. এক টুকরো তামার ভর 50 গ্রাম । তামার আপেক্ষিক তাপ 0.09 হলে তামার টুকরোটির তাপগ্রাহিতা ও জলসম নির্ণয় কর ।
Ans: তামার টুকরোটির তাপগ্রাহিতা=ms=50×0.09=4.5ms=50×0.09=4.5ক্যালোরি / oC
তামার টুকরোটির জলসম =ms=50×0.09=4.5ms=50×0.09=4.5গ্রাম
2. 100 গ্রাম জলের উষ্ণতা 30oC থেকে স্ফুটনাঙ্কে পৌছাতে কত তাপ লাগবে ?
Ans: গৃহীত তাপms(t2−t1)=100×1×(100−30)=100×70=7000ms(t2−t1)=100×1×(100−30)=100×70=7000ক্যালোরি ।
3. 120 গ্রাম জলের 10K উষ্ণতা বৃদ্ধি করতে কত জুল তাপশক্তি লাগবে ?
জলের আপেক্ষিক তাপ = 4200 J/kgK ।
Ans: গৃহীত তাপ =mst=12010004200×10=5040mst=12010004200×10=5040জুল ।
ছোটো প্রশ্ন ও উত্তর :
প্রশ্ন:- SI পদ্ধতিতে আপেক্ষিক তাপের একক কী ?
উত্তর:- SI পদ্ধতিতে আপেক্ষিক তাপের একক হল জুল /কেজি K ।
প্রশ্ন:- 1 সেলসিয়াস ডিগ্রী = কত ফারেনহাইট ডিগ্রী ?
উত্তর:- 1 সেলসিয়াস ডিগ্রী =9595ফারেনহাইট ডিগ্রী ।
প্রশ্ন:- SI পদ্ধতিতে তাপগ্রাহিতার একক কী ?
উত্তর:- SI পদ্ধতিতে তাপগ্রাহিতার একক জুল / K বা জুল/ oC ।
প্রশ্ন:- 20oC তাপমাত্রায় 1 গ্রাম বরফে 80 ক্যালোরি তাপ দিলে চূড়ান্ত তাপমাত্রা কত হবে ?
উত্তর:- 0oC তাপমাত্রার 1 গ্রাম বরফে 80 ক্যালোরি তাপ দিলে 0oC তাপমাত্রা 1 গ্রাম জল পাওয়া যায় । অর্থাৎ, চূড়ান্ত তাপমাত্রা 0oC হবে ।
প্রশ্ন:- কোন তরলের আপেক্ষিক তাপ সবচেয়ে বেশি ?
উত্তর:- জলের আপেক্ষিক তাপ সবচেয়ে বেশি ।
প্রশ্ন:- তাপ মাপার স্কেল দুটি কী কী ?
উত্তর:- তাপ মাপার স্কেল দুটি হল সেলসিয়াস স্কেল ও ফারেনহাইট স্কেল ।
প্রশ্ন:- বিশুদ্ধ জলের আপেক্ষিক তাপ কত ?
উত্তর:- CGS এবং SI পদ্ধতিতে বিশুদ্ধ জলের আপেক্ষিক তাপ যথাক্রমে 1 ক্যালোরি / গ্রাম oC এবং 42000 জুল/কেজি কেলভিন ।
প্রশ্ন:- কোনো বস্তু দ্বারা গৃহীত তাপের পরিমাণ কত ?
উত্তর:- কোনো বস্তু দ্বারা গৃহীত তাপের পরিমাণ = বস্তুর ভর x বস্তুর উপাদানের আপেক্ষিক অংশ x উষ্ণতা বৃদ্ধি ।
প্রশ্ন:- উষ্ণতার সেলসিয়াস স্কেলের স্থিরাঙ্কগুলি কী কী ?
উত্তর:- উষ্ণতার সেলসিয়াস স্কেলের নিম্নস্থিরাঙ্ক 0oC এবং ঊর্ধ্বস্থিরাঙ্ক 100oC ।
প্রশ্ন:- ফারেনহাইট স্কেলের স্থিরাঙ্কগুলি কী কী ?
উত্তর:- ফারেনহাইট স্কেলের নিম্নস্থিরাঙ্ক 32oF এবং ঊর্ধ্বস্থিরাঙ্ক 212oF ।
প্রশ্ন:- থার্মোমিটারের প্রাথমিক অন্তর বলতে কী বোঝায় ?
উত্তর:- থার্মোমিটারের ঊর্ধ্ব স্থিরাঙ্ক এবং নিম্ন স্থিরাঙ্কের মাঝের উষ্ণতার ব্যবধানকে প্রাথমিক অন্তর বলে ।
প্রশ্ন:- ফারেনহাইট স্কেলের স্থিরাঙ্কগুলির প্রাথমিক অন্তর কত ?
উত্তর:- ফারেনহাইট স্কেলের স্থিরাঙ্কগুলির প্রাথমিক অন্তর = ঊর্ধ্বস্থিরাঙ্ক - নিম্নস্থিরাঙ্ক = 212oF - 32oF = 180oF ।
প্রশ্ন:- SI পদ্ধতিতে তাপের একক কী ?
উত্তর:- SI পদ্ধতিতে তাপের একক হল জুল ।
প্রশ্ন:- ক্যালোরিমিতির নীতি কখন প্রযোজ্য হয় না ?
উত্তর:- যে-কোনো দুটি বস্তুর মধ্যে তাপ আদানপ্রদানের সময় যদি বস্তু দুটির সঙ্গে পারিপার্শ্বিকের তাপ বিনিময় ঘটে অথবা তাপশক্তি রাসায়নিক বা অন্য কোনো শক্তিতে রূপান্তরিত হয়, তবে সেক্ষত্রে ক্যালোরিমিতির নীতি প্রযোজ্য হয় না ।
প্রশ্ন:- ডাক্তারি থার্মোমিটারে উষ্ণতার মাপ সাধারণত কোন স্কেলে থাকে ?
উত্তর:- ডাক্তারি থার্মোমিটারে উষ্ণতার মাপের জন্য সাধারণত ফারেনহাইট স্কেলে থাকে । তবে বর্তমানে ডাক্তারি থার্মোমিটারে সেলসিয়াস স্কেলও চালু হয়েছে ।
প্রশ্ন:- 0oC এবং 0oF এর মধ্যে কোনটি কম ?
উত্তর:- 0oC এবং 0oF এর মধ্যে 0oF কম ।
প্রশ্ন:- লোহার আপেক্ষিক তাপ 462 জুল / কেজি K বলতে কী বোঝায় ?
উত্তর:- লোহার আপেক্ষিক তাপ 462 জুল / কেজি K বলতে বোঝায় যে 1 কেজি লোহার উষ্ণতা 1K বা 1oC বৃদ্ধি করতে 462 জুল তাপ শক্তির প্রয়োজন ।
প্রশ্ন:- সেলসিয়াস ফারেনহাইট এবং কেলভিন স্কেলের মধ্যে সম্পর্ক কী ?
উত্তর:- কোনো তাপমাত্রা সেলসিয়াস থার্মোমিটার C, ফারেনহাইট থার্মোমিটার F এবং কেলভিন থার্মোমিটার K হলে এদের মধ্যে সম্পর্ক হলC5=F−329=K−2735C5=F−329=K−2735 ।
প্রশ্ন:- 1 ক্যালোরি = কত জুল ?
উত্তর:- 1 ক্যালোরি = 4.2 জুল ।
প্রশ্ন:- পারদ থার্মোমিটারের উষ্ণতা মাপক ধর্ম কী ?
উত্তর:- পারদ থার্মোমিটারের উষ্ণতা মাপক ধর্ম হল পারদের প্রসারণ ।
প্রশ্ন:- ক্যালোরিমিতির গাণিতিক রূপটি কী ?
উত্তর:- ক্যালোরিমিতির গাণিতিক রূপটি হল : কোনো বস্তুর দ্বারা গৃহীত বা বর্জিত তাপ = বস্তুর ভর x আপেক্ষিক তাপ x উষ্ণতার বৃদ্ধি বা হ্রাস । অর্থাৎ H = mst ।
প্রশ্ন:- সূর্য থেকে কোন পদ্ধতিতে তাপ পৃথিবীতে সঞ্চালিত হয় ?
উত্তর:- সূর্য থেকে বিকিরণ প্রনালীতে তাপ পৃথিবীতে সঞ্চালিত হয় ।
প্রশ্ন:- এক খন্ড তামার তাপগ্রাহিতা 42 জুল /K বলতে কী বোঝায় ?
উত্তর:- এক খন্ড তামার তাপগ্রাহিতা 42 জুল /K বলতে বোঝায় যে, ওই তামা খন্ডের উষ্ণতা 1K বাড়াতে 42 জুল তাপের প্রয়োজন হবে ।
প্রশ্ন:- তাপ সঞ্চালনের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলি কী কী ?
উত্তর:- তাপ সঞ্চালনের তিনটি পদ্ধতি, যথা : পরিবহন, পরিচলন ও বিকিরণ ।
***
No comments:
Post a Comment