মাদার টেরিজা / এক মাতৃরূপী মহীয়সী নারী / সকলের মা মাদার টেরিজা / মা টেরিজাকে আমরা ভুলি নি / করুণাময়ী লোকমাতা মা টেরিজা
“মা টেরিজা বিশ্বমাতা,
মূর্তিমতি করুণা,
সেবা যাহার জীবন ব্রত,
প্রেম ধর্মের সাধনা।”
ভূমিকাঃ আর্ত, পীড়িত, দীন-দরিদ্র অসহায় মানুষের সেবাই ঈশ্বরের সেবা। এই আদর্শকে সামনে রেখে যাঁরা আত্মোৎসর্গ করে ধন্য হয়েছেন, তাদের মধ্যে স্মরণীয় একজন হলেন বিংশ শতাব্দীর জননী—করুণাময়ী মাদার টেরিজা।
জন্ম ও শিক্ষাঃ টেরিজার জন্ম হয় যুগোস্লাভিয়ার স্কপিয়ে শহরে, ১৯১০ খ্রিস্টাব্দের ২৫ আগস্ট। তাঁর পিতার নাম নিকোলাস বোজাশিউ। যিনি বাড়ী তৈরির ঠিকাদারের কাজ করতেন। মাতা ড্রান-ফিল বার্নাই। টেরিজার প্রকৃত নাম ছিল অ্যাগনেস গোনাশা বোজাশিউ।
টেরিজার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় সেক্রেড হার্ট চার্চে। এখানকার শিক্ষা শেষ করে রাষ্ট্রীয় বিদ্যালয়ে পাঠ শুরু করেন সার্বো ক্রোয়েশিয় ভাষায়।
সেবার আহ্বানঃ সেবার উদ্দেশ্য নিয়েই তিনি ভারতে আসেন ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ১৮ বছর বয়সে এবং কলকাতাকেই তাঁর কর্মকেন্দ্র রূপে বেছে নেন। প্রথমে তিনি লরেটোর নবগতা কর্মীরূপে সেন্ট মার্গারিটা স্কুলের শিক্ষিকারূপে যোগদান করেন। ভগবান যীশুর কাছে তিনি প্রত্যাদেশ পান—“আমি এইখানে, এই আর্ত-ক্ষুধিতের ভীড়ে।” তখন থেকেই চাকুরি জীবনের ফাঁকে ফাঁকে মতিঝিল বস্তিতে তাঁর প্রকৃত সেবার কাজ শুরু হয়। মতিঝিল বস্তিতে একটি গাছের তলায় দু-তিনজন শিশুকে নিয়ে তাঁর স্কুল শুরু হয়। শিক্ষাদান ও সেবা এই দুটি ব্রত নিয়ে তাঁর সাধনজীবনের সূত্রপাত। সেই সঙ্গে দুঃখী মানুষের ‘মা’ হয়ে ওঠার তপস্যা।
মাদার হাউসঃ ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে পোপের অনুমতি নিয়ে তিনি ১৪ নং ক্রিক লেনের একটি ছোটো ঘরকে কেন্দ্র করে মানব সেবার কাজ পূর্ণোদ্যমে শুরু করেন। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ৭ই অক্টোবর প্রতিষ্ঠা করেন ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটি’। লোয়ার সার্কুলার রোডে প্রতিষ্ঠা করেন চ্যারিটি নামক সংস্থা।
সেবা কেন্দ্রঃ প্রায় শূণ্য হাতে মাত্র ১০ জন সহযোগিনীকে নিয়ে মাদার সেবার কাজ শুরু করেছিলেন। মাদার হাউসের পাসেই গড়ে তোলেন ‘শিশুভবন’, পরিত্যক্ত, অনাথ শিশুরা আশ্রয় পায় সেখানে। কালীঘাটে প্রতিষ্ঠিত ‘নির্মল হৃদয়’ কুষ্ঠ রোগীদের পরম ঠাঁই। টিটাগড়, আসানসোল, দিল্লিতে গড়ে তোলেন কুষ্ঠ রোগীদের জন্য আশ্রম। ভারতের বাইরে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, রাশিয়া, পোল্যান্ড, যুগোস্লাভিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাঁর সেবাকেন্দ্র। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে ৪৭০টির বেশি সেবা প্রতিষ্ঠান। ভাষাহীন মানুষের চেতনায় ঞ্জানের আলো দিতে গড়েছেন ১২৪টি স্কুল। রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রতিষ্ঠা করেন ২২০টি দাতব্য চিকিৎসালয়।
সম্মান ও পুরস্কারঃ মাদার টেরিজা সারা জীবনে ‘ম্যাগসেসাই’, পোপের আছ থেকে ‘Good Samaritan Prize’, ‘কেনেডি আন্তর্জাতিক পুরস্কার’, ‘সোভিয়েত নেহরুল্যান্ড’, ‘ভারতরত্ন’ এবং ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে নোবেল শান্তি পুরস্কার-এর মতো আরও অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি এইসব পুরস্কারের অর্থ খরচ করেছেন দরিদ্র আতুরদের জন্য।
জীবনাবসানঃ ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ই সেপ্টেম্বর ৮৭ বৎসর বয়সে মাদার টেরিসা খ্রিস্টলোকে প্রয়াণ করেন। তিনি আজ মাদের মাঝে না থাকলেও বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয়ের বেদিতে তিনি আজও আসীন। কবির ভাষায় বলা যায়—
“নয়ন সম্মুখে তুমি নাই
নয়নের মাঝখানে নিয়েছ যে ঠাঁই।”
উপসংহারঃ সকল আতুর জনের পরম আশ্রয় ‘প্রাণের আশ্বাস, মনের আনন্দ, আত্মার শান্তি’ সকলের মাতৃস্বরূপা মাদার টেরিজা আজ আমাদের মধ্যে নেই। তাঁর উত্তরাধিকার হিসাবে আমাদের হৃদয়ে সমাজসেবার চিন্তা ও চেতনা জেগে উঠুক এই যেন আমাদের প্রার্থনা হয়। যেন সকল চিত্তে জাগরূক হয় সেই অমর বাণী—
“বিশ্বজগৎ আমারে মাগিলে কোথায় আমার ঘর,
আমার বিধাতা আমাতে জাগিলে কে মোর আত্মপর।”
--------- x ---------
“মা টেরিজা বিশ্বমাতা,
মূর্তিমতি করুণা,
সেবা যাহার জীবন ব্রত,
প্রেম ধর্মের সাধনা।”
ভূমিকাঃ আর্ত, পীড়িত, দীন-দরিদ্র অসহায় মানুষের সেবাই ঈশ্বরের সেবা। এই আদর্শকে সামনে রেখে যাঁরা আত্মোৎসর্গ করে ধন্য হয়েছেন, তাদের মধ্যে স্মরণীয় একজন হলেন বিংশ শতাব্দীর জননী—করুণাময়ী মাদার টেরিজা।
জন্ম ও শিক্ষাঃ টেরিজার জন্ম হয় যুগোস্লাভিয়ার স্কপিয়ে শহরে, ১৯১০ খ্রিস্টাব্দের ২৫ আগস্ট। তাঁর পিতার নাম নিকোলাস বোজাশিউ। যিনি বাড়ী তৈরির ঠিকাদারের কাজ করতেন। মাতা ড্রান-ফিল বার্নাই। টেরিজার প্রকৃত নাম ছিল অ্যাগনেস গোনাশা বোজাশিউ।
টেরিজার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় সেক্রেড হার্ট চার্চে। এখানকার শিক্ষা শেষ করে রাষ্ট্রীয় বিদ্যালয়ে পাঠ শুরু করেন সার্বো ক্রোয়েশিয় ভাষায়।
সেবার আহ্বানঃ সেবার উদ্দেশ্য নিয়েই তিনি ভারতে আসেন ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ১৮ বছর বয়সে এবং কলকাতাকেই তাঁর কর্মকেন্দ্র রূপে বেছে নেন। প্রথমে তিনি লরেটোর নবগতা কর্মীরূপে সেন্ট মার্গারিটা স্কুলের শিক্ষিকারূপে যোগদান করেন। ভগবান যীশুর কাছে তিনি প্রত্যাদেশ পান—“আমি এইখানে, এই আর্ত-ক্ষুধিতের ভীড়ে।” তখন থেকেই চাকুরি জীবনের ফাঁকে ফাঁকে মতিঝিল বস্তিতে তাঁর প্রকৃত সেবার কাজ শুরু হয়। মতিঝিল বস্তিতে একটি গাছের তলায় দু-তিনজন শিশুকে নিয়ে তাঁর স্কুল শুরু হয়। শিক্ষাদান ও সেবা এই দুটি ব্রত নিয়ে তাঁর সাধনজীবনের সূত্রপাত। সেই সঙ্গে দুঃখী মানুষের ‘মা’ হয়ে ওঠার তপস্যা।
মাদার হাউসঃ ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে পোপের অনুমতি নিয়ে তিনি ১৪ নং ক্রিক লেনের একটি ছোটো ঘরকে কেন্দ্র করে মানব সেবার কাজ পূর্ণোদ্যমে শুরু করেন। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ৭ই অক্টোবর প্রতিষ্ঠা করেন ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটি’। লোয়ার সার্কুলার রোডে প্রতিষ্ঠা করেন চ্যারিটি নামক সংস্থা।
সেবা কেন্দ্রঃ প্রায় শূণ্য হাতে মাত্র ১০ জন সহযোগিনীকে নিয়ে মাদার সেবার কাজ শুরু করেছিলেন। মাদার হাউসের পাসেই গড়ে তোলেন ‘শিশুভবন’, পরিত্যক্ত, অনাথ শিশুরা আশ্রয় পায় সেখানে। কালীঘাটে প্রতিষ্ঠিত ‘নির্মল হৃদয়’ কুষ্ঠ রোগীদের পরম ঠাঁই। টিটাগড়, আসানসোল, দিল্লিতে গড়ে তোলেন কুষ্ঠ রোগীদের জন্য আশ্রম। ভারতের বাইরে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, রাশিয়া, পোল্যান্ড, যুগোস্লাভিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাঁর সেবাকেন্দ্র। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে ৪৭০টির বেশি সেবা প্রতিষ্ঠান। ভাষাহীন মানুষের চেতনায় ঞ্জানের আলো দিতে গড়েছেন ১২৪টি স্কুল। রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রতিষ্ঠা করেন ২২০টি দাতব্য চিকিৎসালয়।
সম্মান ও পুরস্কারঃ মাদার টেরিজা সারা জীবনে ‘ম্যাগসেসাই’, পোপের আছ থেকে ‘Good Samaritan Prize’, ‘কেনেডি আন্তর্জাতিক পুরস্কার’, ‘সোভিয়েত নেহরুল্যান্ড’, ‘ভারতরত্ন’ এবং ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে নোবেল শান্তি পুরস্কার-এর মতো আরও অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি এইসব পুরস্কারের অর্থ খরচ করেছেন দরিদ্র আতুরদের জন্য।
জীবনাবসানঃ ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ই সেপ্টেম্বর ৮৭ বৎসর বয়সে মাদার টেরিসা খ্রিস্টলোকে প্রয়াণ করেন। তিনি আজ মাদের মাঝে না থাকলেও বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয়ের বেদিতে তিনি আজও আসীন। কবির ভাষায় বলা যায়—
“নয়ন সম্মুখে তুমি নাই
নয়নের মাঝখানে নিয়েছ যে ঠাঁই।”
উপসংহারঃ সকল আতুর জনের পরম আশ্রয় ‘প্রাণের আশ্বাস, মনের আনন্দ, আত্মার শান্তি’ সকলের মাতৃস্বরূপা মাদার টেরিজা আজ আমাদের মধ্যে নেই। তাঁর উত্তরাধিকার হিসাবে আমাদের হৃদয়ে সমাজসেবার চিন্তা ও চেতনা জেগে উঠুক এই যেন আমাদের প্রার্থনা হয়। যেন সকল চিত্তে জাগরূক হয় সেই অমর বাণী—
“বিশ্বজগৎ আমারে মাগিলে কোথায় আমার ঘর,
আমার বিধাতা আমাতে জাগিলে কে মোর আত্মপর।”
--------- x ---------
No comments:
Post a Comment