► গ্যাসের ধর্ম [Properties of gases]:-
(ক) গ্যাসীয় পদার্থের কোনো নির্দিষ্ট আকার বা আয়তন নেই । যে পাত্রে রাখা হয় সেই পাত্রের সমগ্র আয়তন জুড়ে থাকে । গ্যাস অণুর ধর্মই হল চারিদিকে ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়া । অণুগুলির গতির জন্যই গ্যাসের প্রবাহী ধর্ম দেখা যায় ।
(খ) গ্যাস অণুর পরস্পরকে আকর্ষণ করার ক্ষমতা অনেক কম । চাপ ও উষ্ণতার সামান্য পরিবর্তনে গ্যাসের আয়তন যথেষ্ট পরিমাণে পরিবর্তিত হয় ।
(গ) স্থির উষ্ণতায় গ্যাসের ওপর চাপ প্রয়োগ করলে কিংবা চাপ স্থির রেখে উষ্ণতা বৃদ্ধি করলে গ্যাসের আয়তন সংকোচন হয় ।
(ঘ) পরস্পর রাসায়নিক বিক্রিয়া করে না এমন দুই বা তার বেশি গ্যাস স্বতঃস্ফূর্তভাবে পরস্পরের সঙ্গে মিশে যায় । গ্যাসের এই ধর্মকে ব্যাপন বলে ।
(ঙ) কঠিন ও তরল পদার্থের তুলনায় গ্যাসের ঘনত্ব অনেক কম ।
(চ) বিভিন্ন গ্যাসের মধ্যে রাসায়নিক ধর্ম এবং প্রকৃতিগত ভাবে পার্থক্য থাকলেও মৌলিক বা যৌগিক সব গ্যাসের ভৌতধর্ম একই রকম হয়
• গ্যাসের চাপ [Pressure of the gas]:- আবদ্ধ গ্যাস পাত্রের দেওয়ালের ওপর লম্বভাবে বল প্রয়োগ করে । দেওয়ালের প্রতি একক ক্ষেত্রফলের ওপর ওই বল যতটা প্রযুক্ত হয় তাকে গ্যাসের চাপ বলে । গ্যাসের চাপ ব্যারোমিটার যন্ত্রে পারদ স্থম্ভের উচ্চতা দিয়ে প্রকাশ করা হয় ।
কোনো গ্যাসের চাপ = 76 সেমি পারদ —এই উক্তির অর্থ, ওই গ্যাসের চাপ 76 সেমি উচ্চতা এবং 1 বর্গসেমি ক্ষেত্রফলবিশিষ্ট একটি পারদস্থম্ভের ওজনের সমান ।
• প্রমাণ চাপ [Standard Pressure]:- সমুদ্রপৃষ্ঠে 45o অক্ষাংশে এবং OoC উষ্ণতায় 76 সেমি পারদ স্থম্ভ যে উদস্থৈতিক চাপ প্রয়োগ করে তাকে প্রমাণ চাপ বা এক বায়ুমন্ডলীয় চাপ বলে । অতএব, এক-বায়ুমন্ডলীয় চাপ = 76 সেমি পারদস্থম্ভের চাপ = 76 x 13.6 (পারদের ঘনত্ব) x 980 (অভিকর্ষজ ত্বরণ) = 1.013 x 106 ডাইন / বর্গসেমি = 1.013 x 105 নিউটন / বর্গমিটার । চাপের আন্তর্জাতিক একক হল পাস্কাল (Pascal, Pa) = নিউটন /বর্গমিটার । সুতরাং, এক-বায়ুমন্ডলীয় চাপ =1.013 x 105 Pa । এছাড়াও চাপ প্রকাশ করতে বার (bar) ও টর (torr) এককের ব্যবহার আছে । 1 বার = 105 Pa এবং 1 টর = 1 মিমি পারদস্থম্ভের চাপ ।
***
►গ্যাসের সূত্রাবলি [Gas laws]:-
চাপ ও উষ্ণতার পরিবর্তনের সঙ্গে গ্যাসের আয়তনের পরিবর্তনের সূত্রগুলিকে গ্যাসের সুত্র বলে ।
[1] বয়েলের সূত্র [Boyle's Law] :- উষ্ণতা স্থির থাকলে, নির্দিষ্ট ভরের যে কোনো গ্যাসের আয়তন ওই গ্যাসের চাপের সঙ্গে ব্যাস্তানুপাতে পরিবর্তিত হয় ।
• বয়েলের সূত্রের গাণিতিক রূপ : নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের আয়তন যদি V হয় এবং এর চাপ P হয়, তাহলে বয়েলের সূত্রানুযায়ীV∝1PV∝1P,যদি উষ্ণতা স্থির থাকে । অথবা, PV = ধ্রুবক । স্থির উষ্ণতায় কোনো নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের চাপ যদি P1, P2, P3 ইত্যাদি হয় এবং আয়তন যথাক্রমে V1, V2, V3 ইত্যাদি হয়, তাহলে বয়েলের সূত্রানুযায়ী P1V1 = P2V2 = P3V3 = K (ধ্রুবক) ।
[2] চার্লসের সূত্র [Charles' Law's]:- চাপ স্থির থাকলে নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের আয়তন প্রতি ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা বৃদ্ধি বা হ্রাসের জন্য ওই গ্যাসের 0oC উষ্ণতায় যে আয়তন হয়, তার12731273অংশ যথাক্রমে বৃদ্ধি বা হ্রাস পায় । 12731273ভগ্নাংশটিকে স্থির চাপে গ্যাসের আয়তন প্রসারণ গুণাঙ্ক বলা হয় ।
• সূত্রের ব্যাখ্যা:- চার্লসের সূত্রানুযায়ী এখান ধরা যাক, 0oC উষ্ণতায় কোনো নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের আয়তন = Vo
অতএব চার্লসের সূত্রানুসারে,
1oC উষ্ণতায় গ্যাসটির আয়তন =Vo+Vo273Vo+Vo273
2oC উষ্ণতায় গ্যাসটির আয়তন =Vo+2Vo273Vo+2Vo273
toC উষ্ণতায় গ্যাসটির আয়তন =Vo+tVo273Vo+tVo273
অর্থাৎ toC উষ্ণতায় গ্যাসটির আয়তন Vt ধরলে,Vt=Vo(1+1273)Vt=Vo(1+1273)
এই সমীকরণটি চার্লসের সূত্রের আঙ্কিকরূপ নির্দেশ করে ।
যদি উষ্ণতা বৃদ্ধি না করে হ্রাস করা হয়, তবে toC উষ্ণতা হ্রাসে গ্যাসের আয়তন হবে,Vt=Vo(1−1273)Vt=Vo(1−1273)
***
► উষ্ণতার পরম স্কেল ও পরম শূন্য [Absolute scale of temperature and absolute zero]:-
• পরম শূন্য [Absolute zero]:- চার্লসের সূত্র থেকে দেখা যায় যে, 0oC থেকে toC উষ্ণতা হ্রাসে নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের আয়তনVt=Vo(1−1273)Vt=Vo(1−1273),যেখানে Vo = 0oC উষ্ণতায় ওই গ্যাসের আয়তন । যদি উষ্ণতা 0oC থেকে 273oC হ্রাস করা যায়; অর্থাৎ -273oC উষ্ণতায় উক্ত গ্যাসের আয়তন হয়,Vt=Vo(1−1273)=0Vt=Vo(1−1273)=0
অর্থাৎ ওই উষ্ণতায় গ্যাস কোনো আয়তন অধিকার করবে না ।
উপরোক্ত ঘটনা একটি সর্বনিম্ন উষ্ণতা নির্দেশ করে, যে উষ্ণতায় নির্দিষ্ট ভরের গ্যাস কোনো আয়তন অধিকার করে না । অঙ্কে এটি সম্ভব হলেও বাস্তবে এটি অসম্ভব । কার্যত আয়তন শুন্য হওয়ার আগেই গ্যাস তরলে পরিণত হয় । যাই হোক অঙ্কের নিয়মে বলা যায়, -273oC -এর কম কোনো উষ্ণতা কল্পনাও সম্ভব নয়, কারণ এরপর গ্যাসের আয়তন ঋণাত্মক হয় । ঋণাত্মক আয়তন অর্থহীন । তাই বলা যেতে পারে বিশ্বে কোথাও কোনো উষ্ণতা -273oC -এর কম হতে পারে না । এই কারণে -273oC উষ্ণতাকে চরম বা পরম শুন্য উষ্ণতা বলা হয় ।
• সংজ্ঞা:- চার্লসের সূত্রানুযায়ী যে উষ্ণতায় নির্দিষ্ট ভরের কোনো গ্যাস কোনো আয়তন অধিকার করে না; অর্থাৎ আয়তন শুন্য হয় —তাকে পরম শুন্য উষ্ণতা বলা হয় ।
• উষ্ণতার পরম স্কেল বা কেলভিন স্কেল : -273oC উষ্ণতাকে শুন্য ডিগ্রি ধরে এবং উষ্ণতার প্রতি ডিগ্রির ব্যবধানকে এক সেলসিয়াস ডিগ্রির সমান করে যে উষ্ণতার স্কেল পাওয়া যায় তাকে উষ্ণতার পরম স্কেল কিংবা কেলভিন স্কেল বলা হয় । 1 সেলসিয়াস ডিগ্রি এবং 1পরম স্কেল ডিগ্রির মাপ সমান করে নিলে, সেলসিয়াস স্কেলে কোনো উষ্ণতা toC পরম স্কেলে রুপান্তরিত করলে হবে, T = (273 + t)K । এই স্কেল অনুযায়ী পরম উষ্ণতাকে বড়ো হাতের T দ্বারা চিহ্নিত করা হয় এবং কেলভিন (K) একক দিয়ে (Ko নয়) প্রকাশ করা হয় । সুতরাং, এই স্কেলে, জলের হিমাঙ্ক 0oC = 273K, জলের স্ফুটনাঙ্ক 100oC = 373K এবং যে-কোনো উষ্ণতা toC = (273 + t)K = TK ।
• সেলসিয়াস স্কেল এবং পরম স্কেলের মধ্যে সম্পর্ক:-
সেলসিয়াস স্কেল -273oC 0oC 100oC toC
পরম স্কেল 0K 273K 373K (273 + t)K
***
► চার্লসের সূত্রের বিকল্প রূপ [Alternative form of Charles's law]:-
চার্লসের সূত্রানুসারে, t1oC উষ্ণতায় নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের আয়তন
Vt=Vo(1+t1273)=Vo(273+t1273)Vt=Vo(1+t1273)=Vo(273+t1273)
এখন(273+t1)=T1K(273+t1)=T1K ∴Vt=Vo×t1273∴Vt=Vo×t1273 ...(i)
আবার, t2oC উষ্ণতায় নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের আয়তন
V2=Vo(1+t1273)=Vo(273+t2273)V2=Vo(1+t1273)=Vo(273+t2273)
এখন(273+t2)=T2K(273+t2)=T2K ∴V2=Vo×t2273∴V2=Vo×t2273 ... (ii)
সমীকরণ (i) ÷ (ii) করে পাই,V1V2=T1T2V1V2=T1T2 বা,V1T1=V2T2V1T1=V2T2বাVTVT = ধ্রুবক ∴∴স্থির চাপেV∝TV∝T
অর্থাৎ, স্থির চাপে নির্দিষ্ট ভরের কোনো গ্যাসের আয়তন তার পরম উষ্ণতার সমানুপাতিক —এটাই পরম স্কেল অনুযায়ী চার্লসের সুত্র ।
• প্রমাণ চাপ ও উষ্ণতা [Standard Temperature and pressure, STP]:- 76 সেন্টিমিটার পারদস্তম্ভের চাপ এবং 0oC বা 273K উষ্ণতাকে একসঙ্গে প্রমাণ চাপ ও উষ্ণতা (STP) বলে ।
***
► বয়েল ও চার্লসের সূত্রদ্বয়ের সমন্বয় [Combination of Boyle's and Charles's laws]:-
মনে করা যাক, নির্দিষ্ট ভরের কোনো গ্যাসের আয়তন, চাপ ও উষ্ণতা যথাক্রমে V, P এবং T তাহলে
বয়েলের সূত্রানুসারেV∝1PV∝1P,যখন উষ্ণতা T স্থির ।
এবং চার্লসের সূত্রানুসারেV∝TV∝T,যখন চাপ P স্থির ।
∴∴চাপ ও উষ্ণতা উভয়েই পরিবর্তিত হলে লেখা যায়
V∝TPV∝TPবাPVP=KPVP=K(ধ্রুবক) বা, PV = KT
ধ্রুবক K -এর মান গ্যাসের ভরের ওপর নির্ভর করে । এটিই বয়েল ও চার্লসের সমন্বয়সূত্র । যদি T1K উষ্ণতায় নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের আয়তন V1 ও চাপ P1 এবং T2K উষ্ণতায় ওই পরিমাণ গ্যাসের আয়তন V2 ও চাপ P2 হয়, তাহলে ওপরের সমীকরণ অনুসারে লেখা যায়, P1V1T1=P2V2T2=KP1V1T1=P2V2T2=Kধ্রুবক
• আদর্শ গ্যাস সমীকরণ বা অবস্থার সমীকরণ [Ideal gas equation or Equation of state]:-
বয়েল ও চার্লসের সমন্বয়সূত্র PV = KT সমীকরণের ধ্রুবক K -এর মান গ্যাসের ভরের ওপর নির্ভর করে । এক গ্রাম-অণু অর্থাৎ, এক মৌল পরিমাণ যে-কোনো গ্যাসের ক্ষেত্রে ধ্রুবক K -এর মান একই হয় । এই ধ্রুবককে R অক্ষর দিয়ে প্রকাশ করা হয় । ধ্রুবক R -কে সার্বজনীন গ্যাস ধ্রুবক বা মোলার গ্যাস ধ্রুবক বলে । এক মোল গ্যাসের বেলায়, PV = RT সমীকরণকে আদর্শ গ্যাস সমীকরণ বা অবস্থার সমীকরণ বলে । n -মোল গ্যাসের বেলায় আদর্শ গ্যাস সমীকরণ হল, PV = nRT
• সার্বজনীন গ্যাস ধ্রুবক :- আদর্শ গ্যাস সমীকরণ PV = RT এর ধ্রুবক R -এর মান গ্যাসের প্রকৃতি ও ধর্মের ওপর নির্ভর করে না । সকল গ্যাসের ক্ষেত্রেই এর মান সমান হয় । তাই R -কে সার্বজনীন গ্যাস ধ্রুবক বলে । R = 8.31 x 107 আর্গ / মোল K = 8.31 জুল/মোল K ; যেহেতু 1 জুল = 107 আর্গ ।
***
► গ্যাসের অণুর গতি [Motion of gas molecules]:-
গ্যাসে গতি সম্বন্ধীয় অঙ্গীকারগুলি [assumptions] হল :
[i] গ্যাসের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণুগুলি সব কঠিন স্থিতিস্থাপক গোলক ।
[ii] একই গ্যাসের সব অণুগুলি একরকম ।
[iii] গ্যাসের অণুগুলির মোট আয়তন গ্যাসের আয়তনের তুলনায় নগন্য ।
[iv] গ্যাসের অণুগুলির মধ্যে কোনো আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল কাজ করে না —তাই এদের কোনো স্থিতিশক্তি নেই এদের শক্তি সম্পূর্ণভাবে গতিশক্তি ।
[v] অণুগুলি সতত গতিসম্পন্ন এবং নিজেদের সঙ্গে সংঘর্ষ স্থিতিস্থাপক হওয়ায় ভরবেগ ও গতিশক্তি সংরক্ষিত থাকে ।
[vi] অণুগুলির মধ্যে সংঘর্ষ তাত্ক্ষনিক ।
[vii] পরপর দুটি সংঘর্ষের মধ্যে পথগুলি সরলরেখা —ওই দুরত্বকে মুক্তপথ [Free path] বলে ।
• আণবিক গতির পক্ষে প্রমাণ [Evidences in favour of molecular motion]:-
[i] গ্যাসের প্রসারণশীলতা ধর্মের দরুন সামান্য পরিমাণ গ্যাস যে-কোনো আকারের পাত্রের সর্বত্র দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ।
[ii] ব্যাপন ধর্মের জন্য ঘরের মধ্যে রাখা এক ফোঁটা সুগন্ধি তেল মুহুর্তের মধ্যে ঘরময় ছড়িয়ে পড়ে ।
[iii] কোনো পাত্রে আবদ্ধ গ্যাস অণুগুলি দ্রুত বেগে যেতে যেতে পাত্রের দেওয়ালে ধাক্কা দেয়, ফলে পাত্রের দেওয়ালে চাপের সৃষ্টি হয় । এই সব ঘটনা প্রমাণ করে যে গ্যাসের অণুগুলি সতত গতিশীল অবস্থায় থাকে ।
• গ্যাসের চাপের ওপর গ্যাস-অণুর গতির প্রভাব [Dependence of pressure on motion of gas molecules]:-
গ্যাস-অণুগুলির গতিশক্তি থাকার জন্য অণুগুলি অবিরত পাত্রের দেওয়ালে আঘাত করতে থাকে । ফলে ভরবেগের পরিবর্তন ঘটে এবং পাত্রের দেওয়ালে চাপের সৃষ্টি হয় । পাত্রের দেওয়ালের প্রতি একক ক্ষেত্রফলের ওপর সংঘর্ষজনিত বলের পরিমাপই হল গ্যাসের চাপ । অণুগুলির গতি বৃদ্ধি পেলে চাপও বেড়ে যায় । এভাবে সৃষ্ট চাপের পরিমাণ অণুগুলির গড় গতিবেগের ওপর নির্ভর করে । গড় গতিবেগ তিনগুণ হলে চাপ নয়গুণ বেড়ে যাবে । এক কথায় গ্যাস-অণুর গতিবেগ হল কারণ এবং চাপ হল তার ফল ।
• গ্যাসের উষ্ণতার ওপর গ্যাস-অণুর গতির প্রভাব [Dependence of temperature on motion of gas molecules]:-
গ্যাস-অণুগুলির গতির মান বাড়লে গ্যাসটির উষ্ণতা বাড়ে, আবার গতি কমলে উষ্ণতা কমে যায় । এর কারণ হল —গ্যাস-অণুগুলির গতি বাড়লে গতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং এই বাড়তি গতিশক্তি তাপশক্তিতে রুপান্তরিত হয় । গ্যাসের গতীয় তত্ত্ব থেকে দেখানো যায় যে, প্রতি গ্যাস-অণুর গড় গতিশক্তি গ্যাসের পরম উষ্ণতার সমানুপাতিক । অর্থাৎ উষ্ণতা হল গ্যাসের অণুগুলির গতিশক্তির বহিঃপ্রকাশ এবং গ্যাসের প্রতিটি অণুর গড় গতিশক্তি হল উষ্ণতার পরিমাণ ।
► আদর্শ গ্যাস ও বাস্তব গ্যাস [Ideal gas and real gas]:-
• আদর্শ গ্যাস [Ideal gas]:- গতীয় তত্ত্বের অঙ্গীকারগুলি যেসব গ্যাস পুরোপুরি মেনে চলে তাদের আদর্শ গ্যাস বলে । গ্যাসের গতীয় তত্ত্ব থেকে বয়েলের সূত্র, চার্লসের সূত্র প্রমাণ করা যায় । অর্থাৎ, যেসব গ্যাস বয়েলের সূত্র, চার্লসের সূত্র সঠিকভাবে মেনে চলে তাদের সবাই হল আদর্শ গ্যাস ।
• বাস্তব গ্যাস [Real gas]:- যেসব গ্যাস বয়েলের সূত্র, চার্লসের সূত্র সঠিকভাবে মেনে চলে না তাদের বাস্তব বা প্রকৃত গ্যাস বলে । হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন প্রভৃতি পরিচিত গ্যাসগুলিকে বাস্তব গ্যাস বলে । আসলে আদর্শ গ্যাসের অস্তিত্ব নিছক কল্পনা মাত্র । শুধুমাত্র উচ্চ উষ্ণতায় এবং নিম্নচাপে বাস্তব গ্যাসগুলি প্রায় আদর্শ গ্যাসের মতো আচরণ করে এবং আদর্শ গ্যাস সমীকরণগুলি মেনে চলে ।
***
♦ গাণিতিক উদাহরণ ♦
☼ বয়েলের সূত্র :
P1V1 = P2V2, যেখানে স্থির উষ্ণতায় নির্দিষ্ট ভরের কোনো গ্যাসের P1 চাপে আয়তন V1 এবং P2 চাপে আয়তন V2 ।
☼ চার্লসের সূত্র :
(i)Vt=Vo(1+1273)Vt=Vo(1+1273), যেখানে স্থির চাপে 0oC উষ্ণতায় নির্দিষ্ট ভরের কোনো গ্যাসের আয়তন Vo এবং toC উষ্ণতায় ওই গ্যাসের আয়তন Vt ।
(ii)V1T1=V2T2V1T1=V2T2যেখানে স্থির চাপে নির্দিষ্ট ভরের কোনো গ্যাসের আয়তন V1 যখন পরম উষ্ণতা T1 এবং আয়তন V2 যখন পরম উষ্ণতা T2 । [ গ্যাসের উষ্ণতা toC হলে, T= (273 + t) । অর্থাৎ t = T - 273 ]
☼ বয়েল ও চার্লসের সমন্বয়সূত্র :
(i) P1V1T1=P2V2T2P1V1T1=P2V2T2,যেখানে নির্দিষ্ট ভরের কোনো গ্যাসের পরম উষ্ণতা T1 এবং চাপ P1 হলে আয়তন V1 এবং পরম উষ্ণতা T2 এবং চাপ P2 হলে আয়তন V2 ।
(ii) P1V1T1=P2V2T2P1V1T1=P2V2T2সূত্রে V1 = V2 হলেP1T1=P2T2P1T1=P2T2; অর্থাৎ স্থির আয়তনে নির্দিষ্ট ভরের কোনো গ্যাসের চাপ P1 যখন পরম উষ্ণতা T1 এবং চাপ P2 যখন পরম উষ্ণতা T2 ।
***
প্রশ্ন:- পরম শূন্য তাপমাত্রার মান সেলসিয়াস স্কেলে কত ?
উত্তর:- পরম শূন্য তাপমাত্রার মান সেলসিয়াস স্কেলে -273oC ।
প্রশ্ন:- কেলভিন স্কেলে প্রমাণ তাপমাত্রার মান কত ?
উত্তর:- কেলভিন স্কেলে প্রমাণ তাপমাত্রার মান 273 K ।
প্রশ্ন:- বয়েল ও চার্লসের সূত্র দুটিতেই যে ভৌতরাশিকে ধ্রুবক ধরা হয় তার নাম লেখ ।
উত্তর:- বয়েল ও চার্লসের সূত্র দুটিতেই গ্যাসের ভর-কে ধ্রুবক ধরা হয় ।
প্রশ্ন:- তাপমাত্রার পরম স্কেলে জলের স্ফুটনাঙ্কের মান কত ?
উত্তর:- তাপমাত্রার পরম স্কেলে জলের স্ফুটনাঙ্কের মান (273 + 100)K = 373K ।
প্রশ্ন:- পরম শূন্য উষ্ণতায় কোনো আদর্শ গ্যাসের আয়তন কত হবে ?
উত্তর:- পরম শূন্য উষ্ণতায় (-273oC) আদর্শ গ্যাসের আয়তন শূন্য হয় ।
প্রশ্ন:- to সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে কেলভিন স্কেলে প্রকাশ করো ।
উত্তর:- সেলসিয়াস স্কেলে কোনো বস্তুর তাপমাত্রা toC হলে কেলভিন স্কেলে ওই তাপমাত্রা T = (273 + t)K ।
প্রশ্ন:- 30oC এবং 300K -এর মধ্যে কোন উষ্ণতাটি বেশি ?
উত্তর:- 30oC = (273 + 30)K = 303K, সুতরাং 30oC এবং 300K -এর মধ্যে 30oC উষ্ণতাটি বেশি ।
প্রশ্ন:- কোনো একদিনের তাপমাত্রা সেলসিয়াস স্কেলে 32oC হলে কেলভিন স্কেলে এই তাপমাত্রার মান কত ?
উত্তর:- সেলসিয়াস স্কেলে 32oC হলে কেলভিন স্কেলে এই তাপমাত্রার মান হবে = (273 + 32)K = 305K ।
প্রশ্ন:- গ্যাসের একটি প্রধান ধর্ম কী ?
উত্তর:- গ্যাসের একটি প্রধান ধর্ম হল গ্যাসকে যে পাত্রে রাখা হয়, গ্যাস সব সময় সেই পাত্রের দেওয়ালে চাপ প্রয়োগ করে । একে গ্যাসীয় চাপ বলে ।
প্রশ্ন:- চার্লসের সূত্রটিতে ধ্রুবক কী কী ?
উত্তর:- চার্লসের সূত্রের ধ্রুবক দুটি হল : (i) গ্যাসের চাপ এবং (ii) গ্যাসের ভর ।
প্রশ্ন:- ফারেনহাইট স্কেলে পরমশূন্যের মান কত ?
উত্তর:- ফারেনহাইট স্কেলে পরমশূন্যের মান = -459.4oF ।
প্রশ্ন:- গ্যাসের চাপ এবং বায়ুমন্ডলীয় চাপ মাপতে ব্যবহৃত যন্ত্রগুলির নাম লেখো ।
উত্তর:- গ্যাসের চাপ মাপতে ম্যানোমিটার এবং বায়ুমন্ডলীয় চাপ মাপতে ব্যারোমিটার যন্ত্র ব্যবহার করা হয় ।
প্রশ্ন:- গ্যাসের চাপ বলতে কী বোঝায় ?
উত্তর:- নির্দিষ্ট উষ্ণতায় আবদ্ধ পাত্রে রাখা কোনো গ্যাস পাত্রের ভেতরের দেওয়ালে একক ক্ষেত্রফলযুক্ত তলের উপর লম্বভাবে যে বল প্রয়োগ করে তাকে ঐ গ্যাসের চাপ বলে । কোনো পাত্রে আবদ্ধ গ্যাস যদি পাত্রটির ভেতরের দেওয়ালের A ক্ষেত্রফলযুক্ত তালের ওপর F বল প্রয়োগ করে তবে ওই গ্যাসের চাপ, P = F/A অর্থাৎ , চাপ = প্রযুক্ত বল / ক্ষেত্রফল
প্রশ্ন:- পাস্কাল কী ?
উত্তর:- S.I. পদ্ধতিতে চাপের একক হল পাস্কাল বা নিউটন /মি2 ।
প্রশ্ন:- পর পর দুটি ধাক্কার মধ্যে একটি গ্যাসীয় অণু যে দুরত্ব অতিক্রম করে তাকে কী বলে ?
উত্তর:- পর পর দুটি ধাক্কার মধ্যে একটি গ্যাসীয় অণু যে দুরত্ব অতিক্রম করে তাকে মুক্তপথ বলে ।
প্রশ্ন:- 250cm3 আয়তনের গ্যাস জারে H2S গ্যাস আবদ্ধ আছে । জারটির সাথে একটি চাপ মাপার যন্ত্র ম্যানোমিটার যুক্ত । এখন জারটিতে তাপ প্রয়োগ করা হলে ম্যানোমিটারের পাঠ একই থাকবে, বাড়বে না কমবে ? গ্যাসের অণুগুলির গতিশীলতার ভিত্তিতে তোমার উত্তর সমর্থন করো ।
উত্তর:- আবদ্ধ পাত্রে রাখা গ্যাসে তাপ প্রয়োগ করলে গ্যাসে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় । এরফলে গ্যাসীয় অণুগুলির গড় গতিবেগ তথা ভরবেগ বৃদ্ধি পায় । গ্যাসীয় অণুগুলির গ্যাসজারের দেওয়ালের সঙ্গে সংঘর্ষের হার বৃদ্ধি পায় । এইজন্য গ্যাসের চাপ বাড়বে । ফলে ম্যানোমিটারের পাঠ বাড়বে ।
***
☼ অ্যাভোগাড্রোর সূত্র [Avogadro's law]:-
বার্জিলিয়াসের প্রকল্প (একই চাপ ও উষ্ণতায় সম-আয়তন সকল গ্যাসের মধ্যে সমান সংখ্যক পরমাণু থাকে) সংশোধন করে অ্যাভোগাড্রো একটি সূত্র প্রকাশ করেন । এটি অ্যাভোগাড্রোর সূত্র নামে খ্যাত । সূত্রটি হল— একই চাপ ও উষ্ণতায় সম-আয়তন সকল গ্যাসের মধ্যে সমান সংখ্যক অণু থাকে ।
ব্যাখ্যা:- অ্যাভোগাড্রোর সূত্র অনুযায়ী একই চাপ ও উষ্ণতায় x cc অক্সিজেনের [O2] মধ্যে যদি n -সংখ্যক অণু থাকে, তবে x cc কার্বন ডাই-অক্সাইডের (CO2) মধ্যে বা x cc অ্যামোনিয়ার [NH3] মধ্যেও সেই একই n -সংখ্যক অণু থাকবে ।
► অ্যাভোগাড্রোর সূত্রের সাহায্যে গ্যাস-আয়তন সূত্র এবং পরমাণুবাদের মধ্যে সমন্বয় [ Reconciliation of law gaseous volumn and Dalton's atomic theory by Avogadro's law]:-
পরীক্ষায় দেখা যায় যে, একই চাপ ও উষ্ণতায় 1 আয়তন হাইড্রোজেন এবং 1 আয়তন ক্লোরিনের রাসায়নিক সংযোগে 2 আয়তন হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস উত্পন্ন হয় ।
মনে করা যাক, পরীক্ষার সময় একই চাপ ও উষ্ণতায়, 1 আয়তন হাইড্রোজেন গ্যাসের মধ্যে n -সংখ্যক হাইড্রোজেন অণু থাকে । তাহলে অ্যাভোগাড্রোর সূত্র অনুযায়ী একই চাপ ও উষ্ণতায় 1 আয়তন ক্লোরিনের মধ্যে n -সংখ্যক ক্লোরিন অণু এবং 2 আয়তন হাইড্রোজেন ক্লোরাইডের মধ্যে 2n -সংখ্যক হাইড্রোজেন ক্লোরাইড অণু থাকবে । কাজেই অণুর সংখ্যা দিয়ে বিক্রিয়াটি প্রকাশ করলে বল যায়,
n -সংখ্যক হাইড্রোজেন অণু + n -সংখ্যক ক্লোরিন অণু = 2n -সংখ্যক হাইড্রোজেন ক্লোরাইড অণু
বা 1টি হাইড্রোজেন অণু + 1টি ক্লোরিন অণু = 2টি হাইড্রোজেন ক্লোরাইড অণু
বা ½ অণু হাইড্রোজেন + ½ অণু ক্লোরিন = 1 অণু হাইড্রোজেন ক্লোরাইড ।
যেহেতু অ্যাভোগাড্রোর সূত্র অনুসারে 1 অণু হাইড্রোজেন = 2 পরামাণু হাইড্রোজেন এবং 1 অণু ক্লোরিন = 2 পরামাণু ক্লোরিন । তাই লেখা যায়—
1 পরমাণু হাইড্রোজেন + 1 পরামাণু ক্লোরিন = 1 অণু হাইড্রোজেন ক্লোরাইড অর্থাৎ 1 অণু হাইড্রোজেন ক্লোরাইড তৈরি হয় 1টি হাইড্রোজেন পরমাণু এবং 1টি ক্লোরিন পরমাণুর সংযোগে । এটি পরমাণুবাদের বিরুদ্ধে নয়, কারণ পরমাণু অবিভাজ্য কিন্তু অণু বিভাজ্য । এই বিক্রিয়ায় গে-লুকাসের গ্যাস আয়তন সূত্র (একই উষ্ণতা ও চাপে বিভিন্ন গ্যাসগুলি আয়তনের পূর্ণ সংখ্যার সরল অনুপাতে রাসায়নিকভাবে মিলিত হয়) অনুযায়ী, একই উষ্ণতা ও চাপে বিক্রিয়ক এবং বিক্রিয়াজাত গ্যাসগুলির আয়তনের অনুপাত H2 : Cl2 : HCl = 1 : 1 : 2, এটি হল পূর্ণ সংখ্যার সরল অনুপাত ।
***
☼ অ্যাভোগাড্রোর সূত্রের অনুসিদ্ধান্ত [Statement of deduction from Avogadro's law]:-
অ্যাভোগাড্রোর সূত্র থেকে নিম্নলিখিত অনুসিদ্ধান্তগুলি পাওয়া যায়—
(১) নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলি ছাড়া অন্যান্য মৌলিক গ্যাসগুলি (যেমন— হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ইত্যাদি) দ্বি-পরমাণুক ।
(২) কোনো গ্যাসের আণবিক ভর [M] গ্যাসটির বাষ্প ঘনত্বের [D] দ্বিগুণ অর্থাৎ, M = 2D ।
(৩) প্রমাণ চাপ ও উষ্ণতায় এক গ্রাম অণু পরিমাণ সকল গ্যাসের (মৌলিক বা যৌগিক) আয়তন 22.4 লিটার হয় । এই আয়তন পদার্থের প্রকৃতি বা ধর্মের ওপর নির্ভর করে না ।
☼ অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা [Avogadro's Number]:- মৌলিক বা যৌগিক যে-কোনো পদার্থের এক গ্রাম অণুর মধ্যে সমান সংখ্যক অণু থাকে । এই সংখ্যাটিকে অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা বলে । এই সংখ্যাকে N দ্বারা প্রকাশ করা হয় ।
বিজ্ঞানী মিলিকান এই সংখ্যাটির মান নির্ণয় করেন । অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা N = 6.023 x 1023 ; এটি একটি নিত্য সংখ্যা— এটি চাপ ও উষ্ণতার ওপর নির্ভর করে না ।
আবার, N.T.P. -তে এক গ্রাম-অণু গ্যাসীয় পদার্থের আয়তন = 22.4 লিটার । সুতরাং, বলা যায়— প্রমাণ চাপ ও উষ্ণতায় 22.4 লিটার আয়তনের গ্যাসের মধ্যে যত সংখ্যক অণু থাকে সেই সংখ্যাকে অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা বলে ।
আবার এক গ্রাম-পরমাণু পরিমাণ কোনো মৌলের মধ্যে যত সংখ্যক পরমাণু থাকে, সেই সংখ্যাকেও অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা বলে । উভয় ক্ষেত্রেই N = 6.023 x 1023 ।
◘ অ্যাভোগাড্রো-সংখ্যা জানা থাকলে মৌলের গ্রাম-আণবিক ভর থেকে মৌলটির একটি অণুর অথবা একটি পরমাণুর ভর নির্ণয় করা যায় ।
যেমন, হাইড্রোজেনের আণবিক ভর = 2.016, হাইড্রোজেনের গ্রাম-আণবিক ভর = 2.016 গ্রাম । এখন 2.016 গ্রাম H2 -এর মধ্যে অণুর সংখ্যা = 6.023 x 1023 গ্রাম ।
অতএব বলা যায় 6.023 x 1023 সংখ্যক হাইড্রোজেন অণুর ভর = 2.016 গ্রাম ।
অতএব 1টি হাইড্রোজেন অণুর ভর = 2.0166.023×1023=3.35×10−242.0166.023×1023=3.35×10−24গ্রাম ।
এখন 1টি হাইড্রোজেন অণুতে দুটি পরমাণু আছে; সুতরাং, 1টি পরমাণুর ভর = 3.35×10−242=1.675×10−243.35×10−242=1.675×10−24গ্রাম ।
☼ মৌল — পদার্থের পরিমাণের একক [Unit of amount of substances]:-
বর্তমানে রাসায়নিক গণনায় 'মোল' -কে একক হিসাবে ব্যবহার করে গণনার কাজ খুব সহজ ও যুক্তিসংগত হয়েছে । এক মোল অণু, এক মোল পরমাণু বা এক মোল আয়ন বলতে অ্যাভোগাড্রো-সংখ্যা N সংখ্যক; অর্থাৎ, 6.023 x 1023 সংখ্যক অণু, পরমাণু বা আয়নের মোট পরিমাণ বোঝায়, যাকে গ্রামে প্রকাশ করলে অণুর ক্ষেত্রে গ্রাম আণবিক ভর, পরমাণুর ক্ষেত্রে গ্রাম-পারমাণবিক ভর বা আয়নের ক্ষেত্রে গ্রাম আয়নীয় ভরের সমান হয় । 'মোল' ধারণার পরিপেক্ষিতে প্রচলিত 'গ্রাম-অণু', গ্রাম-পরমাণু', 'গ্রাম-আয়ন' এর পরিবর্তে এখন 'মোল-অণু', 'মোল-পরমাণু', 'মোল-আয়ন' ব্যবহার করা হয় । এই কারণে রসায়ন বিজ্ঞানে 'মোল' -এর ব্যবহার খুবই ব্যাপক ।
◘ SI পদ্ধতিতে 'মোল' -এর সংজ্ঞা : 0.012 কেজি কার্বন -12 (C12) -তে যত সংখ্যক কার্বন পরমাণু আছে, কোনো পদার্থের যে পরিমাণ ভরে ঠিক তত সংখ্যক অণু বা পরমাণু বা আয়ন বর্তমান থাকে, সেই পরিমাণ ভরকে 'এক মোল-অণু'; 'এক মোল-পরমাণু' বা 'এক মোল-আয়ন' বলে ।
☼ অ্যাভোগাড্রো প্রকল্প বা অ্যাভোগাড্রো সূত্র কোনটি বলা যুক্তিসংগত :- অ্যাভোগাড্রো প্রকল্পের সত্যতা প্রত্যক্ষভাবে কোনো পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি । সুতরাং, সংজ্ঞানুসারে একে অ্যাভোগাড্রো প্রকল্প বলাই উচিত । কিন্তু এই প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত প্রত্যেকটি অনুসিদ্ধান্ত পরীক্ষালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে । কাজেই অণু সম্বন্ধে অ্যাভোগাড্রোর ধারণাগুলিকে প্রকল্প না বলে সূত্র বলাই সংগত ।
***
♦ গাণিতিক উদাহরণ ♦
1. 9 গ্রাম জলে অণুর সংখ্যা কত ?
Ans: জলের(H2O)(H2O)আণবিক ভর =2×1+16=182×1+16=18;
সুতরাং, জলের গ্রাম আণবিক ভর = 18 গ্রাম ।
তাহলে, 18 গ্রাম জলে অণুর সংখ্যা =6.023×10236.023×1023;
অ্যাভোগাড্রোর সূত্র
☼ অ্যাভোগাড্রোর সূত্র [Avogadro's law]:-
ছোটো প্রশ্ন ও উত্তর : [অ্যাভোগাড্রোর সূত্র]
প্রশ্ন:- কোন বিজ্ঞানী সর্বপ্রথম অণুর ধারণা দেন ?
উত্তর:- ইতালীয় বিজ্ঞানী অ্যামিদিও অ্যাভোগাড্রো সর্বপ্রথম অণুর ধারণা দেন ।
প্রশ্ন:- STP তে কোনো গ্যাসের আয়তন কত ?
উত্তর:- STP তে কোনো গ্যাসের মোলার আয়তন 22.4 লিটার ।
☼ আণবিক ভর [Molecular mass]:-
কোনো মৌল বা যৌগের একটি অণু একটি কার্বন -12 (C12) পরমাণুর ভরের 1/12 অংশের তুলনায় যতগুণ ভারী, সেই তুলনামূলক সংখ্যাটিকে ওই মৌল বা যৌগের আণবিক ভর বলে ।
অর্থাৎ, আণবিক ভর = মৌল বা যৌগের 1টি অণুর ভর / 1টি কার্বন -12 (C12) পরমাণুর ভরের 1/12 অংশ
◘ আণবিক ভর একটি সংখ্যা মাত্র, এর কোনো একক নাই ।
এই হিসাব অনুযায়ী, অক্সিজেনের আণবিক ভর = 32 বলতে এই বোঝায় যে, 1টি অক্সিজেন অণুর ভর 1টি কার্বন - 12 (C12) পরমাণুর ভরের 1/12 অংশের চেয়ে 32 গুণ ভারী ।
☼ গ্রাম-পারমাণবিক ভর বা এক গ্রাম-পরমাণু [Gram-atomic mass or one gram-atom]:-
কোনো মৌলিক পদার্থের পারমাণবিক ভরকে গ্রামে প্রকাশ করলে যত গ্রাম হয়, গ্রামে প্রকাশিত সেই ভরকে ওই মৌলিক পদার্থের গ্রাম-পারমাণবিক ভর বা এক গ্রাম-পরমাণু বলে । যেমন— অক্সিজেনের পারমাণবিক ভর 16, অতএব 16 গ্রাম অক্সিজেনকে এক গ্রাম-পরমাণু অক্সিজেন বলে ।
☼ গ্রাম-আণবিক ভর বা গ্রাম-অণু বা গ্রাম-মোল [Gram-molecular mass or gram-molecule or gram mole]:-
কোনো মৌলক বা যৌগিক পদার্থের আণবিক ভরকে গ্রামে প্রকাশ করলে যত গ্রাম হয়, গ্রামে প্রকাশিত সেই ভরকে ওই মৌলিক বা যৌগিক পদার্থের গ্রাম-আণবিক ভর বা এক গ্রাম-অণু বা এক গ্রাম-মোল বলে । গ্রাম-মোলকে সংক্ষেপে মোল [Mole] বলে । যেমন— অক্সিজেনের আণবিক ভর = 32, অতএব অক্সিজেনের গ্রাম-আণবিক ভর = 32 গ্রাম । এই 32 গ্রাম ভরের অক্সিজেনকে এক গ্রাম-অণু বা এক গ্রাম-মোল অক্সিজেন বলে ।
☼ বাষ্প-ঘনত্ব বা আপেক্ষিক ঘনত্ব [Vapour density or relative density]:-
একই চাপ ও উষ্ণতায় কোনো গ্যাসের ভর ওর সমআয়তন হাইড্রোজেন গ্যাসের ভরের চেয়ে যতগুণ ভারী, সেই সংখ্যাকে ওই গ্যাসের বাষ্প ঘনত্ব বা আপেক্ষিক ঘনত্ব বলে ।
অর্থাৎ, গ্যাসের বাষ্প ঘনত্ব [D] = V আয়তন গ্যাসের ভর / V আয়তন হাইড্রোজেন গ্যাসের ভর ।
☼ গ্রাম-আণবিক আয়তন বা মোলার আয়তন [Molar Volume]:-
নির্দিষ্ট চাপ ও উষ্ণতায় যে কোনো মৌলিক বা যৌগিক গ্যাসের এক গ্রাম-অণু যে পরিমাণ আয়তন অধিকার করে, সেই আয়তনকে ওই গ্যাসের গ্রাম-আণবিক আয়তন বা মোলার আয়তন বলে । মোলার আয়তন কেবলমাত্র চাপ ও উষ্ণতার ওপর নির্ভর করে, পদার্থের প্রকৃতি বা ধর্মের ওপর নির্ভর করে না । প্রমাণ চাপ ও উষ্ণতায় যে-কোনো গ্যাসের মোলার আয়তন 22.4 লিটার । যেমন— N.T.P. -তে এক গ্রাম-অণু O2 বা 32 গ্রাম O2 -এর মোলার আয়তন = 22.4 লিটার । এভাবে N.T.P. -তে 2 গ্রাম অণু যে-কোনো গ্যাসের আয়তন = 2 x 22.4 = 44.8 লিটার ।
***
♦ গাণিতিক উদাহরণ ♦
1. 9 গ্রাম জলে অণুর সংখ্যা কত ?
Ans: জলের(H2O)(H2O)আণবিক ভর =2×1+16=182×1+16=18;
সুতরাং, জলের গ্রাম আণবিক ভর = 18 গ্রাম ।
তাহলে, 18 গ্রাম জলে অণুর সংখ্যা =6.023×10236.023×1023;
তাহলে 9 গ্রাম জলে অণুর সংখ্যা =6.023×102318×96.023×102318×9 = 3.0115×10233.0115×1023
***
প্রশ্ন:- কোন বিজ্ঞানী সর্বপ্রথম অণুর ধারণা দেন ?
উত্তর:- ইতালীয় বিজ্ঞানী অ্যামিদিও অ্যাভোগাড্রো সর্বপ্রথম অণুর ধারণা দেন ।
প্রশ্ন:- STP তে কোনো গ্যাসের আয়তন কত ?
উত্তর:- STP তে কোনো গ্যাসের মোলার আয়তন 22.4 লিটার ।
প্রশ্ন:- 3.0115×10233.0115×1023সংখ্যক ইলেকট্রন কত মোল ইলেক্ট্রনের সমান ?
উত্তর:- 6.023×10236.023×1023সংখ্যক ইলেকট্রন = 1 মোল ইলেক্ট্রন ।
অতএব3.0115×10233.0115×1023সংখ্যক ইলেকট্রন=3.0115×10236.023×10233.0115×10236.023×1023মোল ইলেক্ট্রন । = 0.5 মোল ইলেকট্রন ।
প্রশ্ন:- অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা কাকে বলে ? এর মান কত ?
উত্তর:- এক গ্রাম-অণু পরিমাণ যে-কোনো পদার্থে সমান সংখ্যক অণু থাকে । এই সংখ্যাকে অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা বলে । অ্যাভোগাড্রো সংখ্যার মান : 6.023 x 1023 ।
প্রশ্ন:- 32 গ্রাম অক্সিজেনে অণুর সংখ্যা কত ?
উত্তর:- 32 গ্রাম অক্সিজেনে অণুর সংখ্যা = 6.023 x 1023 ।
প্রশ্ন:- নাইট্রোজেনের গ্রাম আণবিক ওজন কত ? (N = 14)
উত্তর:- নাইট্রোজেনের আণবিক গুরুত্ব = 14 x 2 = 28 । নাইট্রোজেনের গ্রাম আণবিক ওজন = 28 গ্রাম ।
প্রশ্ন:- 12 গ্রাম কার্বনে পরমাণুর সংখ্যা কত ?
উত্তর:- 12 গ্রাম কার্বনে পরমাণুর সংখ্যা = 6.023 x 1023 ।
প্রশ্ন:- 1 গ্রাম-পরমাণু অক্সিজেনে পরমাণুর সংখ্যা কত ?
উত্তর:- 1 গ্রাম-পরমাণু অক্সিজেনে পরমাণুর সংখ্যা = 6.023 x 1023 ।
প্রশ্ন:- মৌলের পারমাণবিকতা বলতে কী বোঝায় ?
উত্তর:- কোনো মৌলের একটি অণু যতগুলি পরমাণু দিয়ে গঠিত সেই সংখ্যাকে ওই মৌলের পারমাণবিকতা বলে ।
প্রশ্ন:- ওজন গ্যাসের পারমাণবিকতা কত ?
উত্তর:- ওজন গ্যাসের (O3) পারমাণবিকতা = 3 ।
প্রশ্ন:- আর্গন গ্যাসের পারমাণবিকতা কত ?
উত্তর:- আর্গন গ্যাসের পারমাণবিকতা = 1 ।
প্রশ্ন:- একটি গ্যাসীয় মৌলের নাম লেখো যার অণু ও পরমাণু সমার্থক ?
উত্তর:- গ্যাসীয় মৌলটির নাম হিলিয়াম । হিলিয়ামের একটি অণুতে একটি মাত্র পরমাণু থাকে ।
প্রশ্ন:- আণব আয়তন কাকে বলে ? N.T.P. তে এর মান কত ?
উত্তর:- প্রমাণ উষ্ণতা ও চাপে এক গ্রাম-অণু পরিমাণ যে কোনো গ্যাসের আয়তনকে আণব আয়তন বলে । N.T.P. তে আণব আয়তনে মান = 22.4 লিটার ।
প্রশ্ন:- একটি গ্যাসের বাষ্প ঘনত্ব 8.5, ওই গ্যাসের আণবিক গুরুত্ব কত ?
উত্তর:- গ্যাসের আণবিক গুরুত্ব = 2 x গ্যাসের বাষ্প ঘনত্ব = 2 x 8.5 = 17 ।
প্রশ্ন:- পরমাণুবাদের জনক কে ?
উত্তর:- পরমাণুবাদের জনক হলেন স্যার জন ডালটন ।
প্রশ্ন:- 0.5 মোল জলের ভর কত ?
উত্তর:- জলের আণবিক ভর = 18; অতএব, 1 মোল জল = 18 গ্রাম ।
সুতরাং 0.5 মোল জল = (18 x 0.5) গ্রাম জল = 9 গ্রাম জল ।
প্রশ্ন:- N.T.P. -তে 5.6 লিটার NH3 গ্যাসের মধ্যে অণুর সংখ্যা কত ?
উত্তর:- 1 গ্রাম-অণু অ্যামোনিয়া = 17 গ্রাম NH3 ≡ 22.4 লিটার NH3 (NTP -তে)
অতএব N.T.P. -তে 22.4 লিটার অ্যামোনিয়ায় অণুর সংখ্যা 6.023 x 1023
অতএব N.T.P. -তে 5.6 লিটার অ্যামোনিয়ায় অণুর সংখ্যা = 6.023×102322.4×5.6=1.5057×10236.023×102322.4×5.6=1.5057×1023 ।
প্রশ্ন:- S.T.P. -তে N লিটার হাইড্রোজেন গ্যাসে অণুসংখ্যা 6.023 x 1023 হলে STP তে 2V লিটার কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসে অণুসংখ্যা কত ?
উত্তর:- যেহেতু H2 গ্যাসে অণুসংখ্যা = 6.023 x 1023
অতএব 1 গ্রাম অণু H2 নেওয়া হয়েছিল ।
অতএব V লিটার H2 এ অণুসংখ্যা = 6.023 x 1023
অতএব 2V লিটার কার্বন ডাই-অক্সাইডে অণুসংখ্যা = 2 x 6.023 x 1023 ।
প্রশ্ন:- কোনো যৌগের একটি অণুর ভর 5.65 x 10-23 গ্রাম । যৌগটির আণবিক ভর কত ?
উত্তর:- যৌগটির 1 -টি অণুর ভর = 5.65 x 10-23 গ্রাম ।
অতএব যৌগটির 6.023 x 1023 -টি অণুর ভর = 6.023 x 1023 x 5.65 x 10-23 গ্রাম = 34.03 গ্রাম (প্রায়) ।
সুতরাং যৌগটির আণবিক ভর = 34.03 ।
প্রশ্ন:- একই উষ্ণতা ও চাপে V লিটার অক্সিজেন এবংV2V2লিটার সালফার ডাই-অক্সাইড গ্যাস সংগ্রহ করা হল । সংগৃহিত অক্সিজেনের ভর 32 গ্রাম হলেV2V2লিটার সালফার ডাই-অক্সাইডে অণুর সংখ্যা কত ? (O = 16)
উত্তর:- 1 গ্রাম-অণু অক্সিজেন = 32 গ্রাম অক্সিজেন ।
অতএব V লিটার অক্সিজেনে অণুর সংখ্যা = 6.023 x 1023 ।
সুতরাংV2V2সালফার ডাই-অক্সাইডে অণুর সংখ্যা = 12×6.023×1023=3.0115×102312×6.023×1023=3.0115×1023
***
No comments:
Post a Comment