Thursday, 24 January 2019

চলন ও গমন ( Movement And Locomotion )



চলন ও গমন ( Movement And Locomotion )

সংজ্ঞা ( Definition ) - বাহ্যিক উদ্দীপকের উপস্থিতিতে বা অনুপুস্থিতিতে জৈবিক প্রয়োজনের অভ্যন্তরীণ তাগিদে কোনও নির্দিষ্ট জায়গায় স্থির থেকে জীবের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সঞ্চালনকে চলন বলে।

চলন সাধারণত উদ্ভিদের দেখা যায়। ( ব্যাতিক্রম – ভলভস্ক, ক্লামাইডোমোনাস )

উদাহরণ –

১৷ লাউ ও কুমড়ো গাছের কাণ্ডের চলন ( উদ্দীপকের অনুপস্থিতিতে )

২৷ পদ্ম ফুলের পাপড়ির চলন ( উদ্দীপকের উপস্থিতিতে )

সংজ্ঞা ( Definition ) - বাহ্যিক উদ্দীপকের উপস্থিতিতে বা অনুপস্থিতিতে জৈবিক প্রয়োজনের অভ্যন্তরীণ তাগিদে অঙ্গ  প্রত্যঙ্গ সঞ্চালনের মাধ্যমে জীবের পরিমাপ যোগ্য দূরত্ব অতিক্রম করাকে গমন বলে।

সাদারণত প্রাণীদের গমন দেখা যায়।

উদাহরণ –

১৷ ক্লামাইডোমনাস নামক শৈবালের গমন দেখা যায় ( উদ্দীপকের অনুপস্থিতিতে )

২৷ হাইড্রার কর্সিকার সাহায্যে গমন ( উদ্দীপকের উপস্থিতিতে )

চলন ও গমনের উদ্দেশ্য ( Purpose of locomotion )

১৷ খাদ্য সংগ্রহ

প্রাণীর ক্ষেত্রে – প্রাণীরা খাদ্য সংগ্রহের জন্য স্থানান্তরে গমন করে।

উদ্ভিদের ক্ষেত্রে – উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরি করে। তাই খাদ্য সংগ্রহের জন্য উদ্ভিদের গমনের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু পর্যাপ্ত আলো পাওয়ার জন্য উদ্ভিদের কাণ্ড আলোর দিকে এবং জল সংগ্রহের জন্য উদ্ভিদের মূল মাটির গভীরে যায়।

২৷ বাঁচার অনুকূল পরিবেশের সন্ধান

প্রাণীর ক্ষেত্রে – প্রাণীরা উপযুক্ত পরিবেশের জন্য স্থানান্তরে গমন করে।

উদ্ভিদের ক্ষেত্রে – আলো বাতাস ও জল পাওয়ার জন্য উদ্ভিদ অঙ্গের চলন দেখা যায়।

৩৷ জৈবিক প্রয়োজন

প্রাণীর ক্ষেত্রে – প্রাণীরা প্রজন্নের জন্য স্থানান্তরে গমন করে।

উদ্ভিদের ক্ষেত্রে – নিম্ন শ্রেণীর উদ্ভিদেরা প্রজন্নের জন্য গমন করে। উদ্ভিদের রেনু বিভিন্ন ভাবে বাহিত হয়ে প্রজন্ন কার্য সম্পন্ন করে।

৪৷ আত্মরক্ষার জন্য

প্রাণীর ক্ষেত্রে – শত্রুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রাণী স্থান পরিবর্তন করে।

উদ্ভিদের ক্ষেত্রে – উদ্ভিদ আত্মরক্ষা মূলক দেহাংশ গঠন করে আত্মরক্ষার কাজ করে।

চলন

গমন

১৷ এই প্রক্রিয়ায় জীবের সামগ্রিক স্থান পরিবর্তন হয় না।

১৷ এই প্রক্রিয়ায় জীবের সামগ্রিক স্থান পরিবর্তন হয়।

২৷ এই প্রক্রিয়ায় জীবের অঙ্গ বিশেষের সঞ্চালন ঘটে।

২৷ এই প্রক্রিয়ায় জীবের সামগ্রিক দেহের সঞ্চালন ঘটে।

৩৷ কোনো নির্দিষ্ট স্থানে আবদ্ধ থেকে চলন সম্ভব।

৩৷ কোনো নির্দিষ্ট স্থানে আবদ্ধ থেকে গমন সম্ভব নয়।

৪৷ গমন ছাড়াও চলন সম্ভব।

৪৷ চলন ছাড়া গমন অসম্ভব।

৫৷ প্রায় সমস্ত জীবদেহেই চলন লক্ষ্য করা যায়।

৫৷ কিছু নিম্ন শ্রেণীর উদ্ভিদ এবং প্রায় সমস্ত প্রাণীর দেহে গমন লক্ষ্য করা যায়।










উদ্ভিদ দেহে ন্যাস্টিক চলন ( Nastic movement in plants )

উদ্ভিদের স্থায়ী অঙ্গের চলন যখন উদ্দীপকের তীব্রতা বা ব্যাপ্তি অনুসারে হয় , তখন তাকে ন্যাস্টিক চলন বা ব্যাপ্তি চলন বলে। যেমন পদ্মফুল তীব্র আলোতে ফোটে এবং কম আলোতে বুজে যায় , এছাড়া লজ্জাবতী লতা স্পর্শ করলে সঙ্গে সঙ্গে পত্রক গুলি বুজে যায়।



চলন ও গমন ( Movement And Locomotion )

সংজ্ঞা ( Definition ) - বাহ্যিক উদ্দীপকের উপস্থিতিতে বা অনুপুস্থিতিতে জৈবিক প্রয়োজনের অভ্যন্তরীণ তাগিদে কোনও নির্দিষ্ট জায়গায় স্থির থেকে জীবের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সঞ্চালনকে চলন বলে।

চলন সাধারণত উদ্ভিদের দেখা যায়। ( ব্যাতিক্রম – ভলভস্ক, ক্লামাইডোমোনাস )

উদাহরণ –

১৷ লাউ ও কুমড়ো গাছের কাণ্ডের চলন ( উদ্দীপকের অনুপস্থিতিতে )

২৷ পদ্ম ফুলের পাপড়ির চলন ( উদ্দীপকের উপস্থিতিতে )

সংজ্ঞা ( Definition ) - বাহ্যিক উদ্দীপকের উপস্থিতিতে বা অনুপস্থিতিতে জৈবিক প্রয়োজনের অভ্যন্তরীণ তাগিদে অঙ্গ  প্রত্যঙ্গ সঞ্চালনের মাধ্যমে জীবের পরিমাপ যোগ্য দূরত্ব অতিক্রম করাকে গমন বলে।

সাদারণত প্রাণীদের গমন দেখা যায়।

উদাহরণ –

১৷ ক্লামাইডোমনাস নামক শৈবালের গমন দেখা যায় ( উদ্দীপকের অনুপস্থিতিতে )

২৷ হাইড্রার কর্সিকার সাহায্যে গমন ( উদ্দীপকের উপস্থিতিতে )

চলন ও গমনের উদ্দেশ্য ( Purpose of locomotion )

১৷ খাদ্য সংগ্রহ

প্রাণীর ক্ষেত্রে – প্রাণীরা খাদ্য সংগ্রহের জন্য স্থানান্তরে গমন করে।

উদ্ভিদের ক্ষেত্রে – উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরি করে। তাই খাদ্য সংগ্রহের জন্য উদ্ভিদের গমনের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু পর্যাপ্ত আলো পাওয়ার জন্য উদ্ভিদের কাণ্ড আলোর দিকে এবং জল সংগ্রহের জন্য উদ্ভিদের মূল মাটির গভীরে যায়।

২৷ বাঁচার অনুকূল পরিবেশের সন্ধান

প্রাণীর ক্ষেত্রে – প্রাণীরা উপযুক্ত পরিবেশের জন্য স্থানান্তরে গমন করে।

উদ্ভিদের ক্ষেত্রে – আলো বাতাস ও জল পাওয়ার জন্য উদ্ভিদ অঙ্গের চলন দেখা যায়।

৩৷ জৈবিক প্রয়োজন

প্রাণীর ক্ষেত্রে – প্রাণীরা প্রজন্নের জন্য স্থানান্তরে গমন করে।

উদ্ভিদের ক্ষেত্রে – নিম্ন শ্রেণীর উদ্ভিদেরা প্রজন্নের জন্য গমন করে। উদ্ভিদের রেনু বিভিন্ন ভাবে বাহিত হয়ে প্রজন্ন কার্য সম্পন্ন করে।

৪৷ আত্মরক্ষার জন্য

প্রাণীর ক্ষেত্রে – শত্রুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রাণী স্থান পরিবর্তন করে।

উদ্ভিদের ক্ষেত্রে – উদ্ভিদ আত্মরক্ষা মূলক দেহাংশ গঠন করে আত্মরক্ষার কাজ করে।

চলন

গমন

১৷ এই প্রক্রিয়ায় জীবের সামগ্রিক স্থান পরিবর্তন হয় না।

১৷ এই প্রক্রিয়ায় জীবের সামগ্রিক স্থান পরিবর্তন হয়।

২৷ এই প্রক্রিয়ায় জীবের অঙ্গ বিশেষের সঞ্চালন ঘটে।

২৷ এই প্রক্রিয়ায় জীবের সামগ্রিক দেহের সঞ্চালন ঘটে।

৩৷ কোনো নির্দিষ্ট স্থানে আবদ্ধ থেকে চলন সম্ভব।

৩৷ কোনো নির্দিষ্ট স্থানে আবদ্ধ থেকে গমন সম্ভব নয়।

৪৷ গমন ছাড়াও চলন সম্ভব।

৪৷ চলন ছাড়া গমন অসম্ভব।

৫৷ প্রায় সমস্ত জীবদেহেই চলন লক্ষ্য করা যায়।

৫৷ কিছু নিম্ন শ্রেণীর উদ্ভিদ এবং প্রায় সমস্ত প্রাণীর দেহে গমন লক্ষ্য করা যায়।


উদ্ভিদের চলন ( Movement of Plants )

বেশির ভাগ উদ্ভিদের কোনো নির্দিষ্ট গমন অঙ্গ থাকে না, তারা মূলের সাহায্যে মাটিতে আবদ্ধ থাকে। কোনো কোনো দুর্বল কাণ্ড বিশিষ্ট ও লতানে উদ্ভিদের আকর্ষ থাকে। প্রকৃত পক্ষে আকর্ষ হল পাতা ও শাখার রূপান্তর, এর সাহায্যে সব উদ্ভিদ কোনো অবলম্বনকে জড়িয়ে ধরে আহরণ করে। তবে কয়েকটি নিম্ন শ্রেণীর শৈবাল জাতীয় উদ্ভিদ, যেমন ক্লামাইডোমোনাস, ভল্ভক্স ইত্যাদির ফ্লাজেলা থাকায় তারা গমনে সক্ষম।

প্রকারভেদ

উদ্ভিদের প্রধানত তিন ধরনের চলন দেখা যায় যথা

(ক) ট্যাকটিক চলন ,

(খ) ট্রপিক চলন ,

(গ) ন্যাস্টিক চলন


উদ্ভিদ দেহে ট্যাকটিক চলন ( Tactic movement in plants )

বহিঃস্থ উদ্দীপকের প্রভাবে উদ্ভিদ বা উদ্ভিদ অঙ্গের স্থান পরিবর্তন কে আবিষ্ট চলন বা ট্যাকটিক চলন বলে।



ট্যাকটিক চলনের প্রকারভেদ ( Types of Tactic Movement )

১৷ ফটোট্যাকটিক ( Phototactic )

উদ্ভিদের সমস্ত দেহ যখন আলো উদ্দীপকের প্রভাবে স্থান পরিবর্তন করে, তখন তাকে ফটোট্যাকটিক বা আলোক-অভিমুখ্য চলন বলে। কয়েক প্রকার শৈবালের এই রকম চলন দেখা যায়।

২৷ থার্মট্যাকটিক ( Thermotactic )

উদ্ভিদের সমস্ত দেহ যখন উষ্ণতা উদ্দীপকের প্রভাবে স্থানান্তরিত হয়, তখন থার্মট্যাকটিক বা উষ্ণতা অভিমুখ্য চলন বলে। পাতাশেওলা নামে উদ্ভিদের পাতার কোষের প্রবাহ গতি এই রকম চলন।

৩৷ কেমোট্যাকটিক ( Chemotactic )

উদ্ভিদের সমগ্র দেহ বা কোনো অংশ যখন কোনো রাসায়নিক পদার্থের আকর্ষণে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায়, তখন তাকে কেমোট্যাকটিক চলন বলে। যেমন ম্যালিক অ্যাসিডের আকর্ষণে ফার্ন গাছের শুক্রাণু ডিম্বাণুর দিকে ধাবিত হয়। গ্লুকোজের দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে মসের শুক্রানুর চলন এই ধরনের।

৪৷ হাইড্রোট্যাকটিক ( Hydrotactic )

জলের প্রভাবে যে ট্যাকটিক চলন হয়, তাকে হাইড্রোট্যাকটিক বলে। যেমন শৈবালের শুষ্ক অঞ্চল থেকে জলের দিকের চলন।


উদ্ভিদ দেহে ট্রপিক চলন ( Tropic Movement in plants )

উদ্ভিদ অঙ্গের চলন যখন উদ্দীপকের গতিপথ অনুসরন করে হয় তখন তাকে ট্রপিক চলন বা দিকনির্ণীত চলন বা ট্রপিজম বলে।



ট্রপিক চলনের প্রকারভেদ ( Types of Tropic Movement )

১৷ ফটোট্রপিক চলন ( Phototropic Movement )

উদ্ভিদের যে ট্রপিক চলন আলোক উৎসের গতিপথ অনুসারে হয় তখন তাকে ফটোট্রপিক বা আলোকবর্তী চলন বলে। উদ্ভিদ অঙ্গের আলোকবর্তী চলন অক্সিন নামক এক রকম হরমোনের প্রভাবে ঘটে। উদ্ভিদের যে অংশে আলো পড়ে তার বিপরীত দিকে অর্থাৎ অন্ধকারের দিকে বেশি মাত্রায় অক্সিন সঞ্চিত হয়ে ঐ অঞ্চলের কোষ গুলিকে দ্রুত বিভাজিত করে। এর ফলে ঐ অংশটি বেশি মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। ফলে কাণ্ড আলোর দিকে বেঁকে যায়। কিন্তু মূলের ক্ষেত্রে অক্সিন আলোর অংশের দিকে বেশি কাজ করে। ফলে মূল আলোর বিপরীত দিকে বেঁকে যায়।

ফটোট্রপিক চলনের পরীক্ষা

একটি টবে লাগানো তাজা চারাগাছকে একটি অন্ধকার ঘরের জানালার পাশে টেবিলের উপর রাখা হল। কয়েকদিন পর পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে যে, চারা গাছটি ক্রমশ খোলা জানালার দিকে বেঁকে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরীক্ষাটি থেকে প্রমাণিত হয় যে উদ্ভিদের কাণ্ডের চলন আলোক অনুকূলবর্তী।





২৷ জিওট্রপিক চলন ( Geotropic Movement )

মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ফলে উদ্ভিদ অঙ্গের চলন যখন অভিকর্ষের গতিপথ অনুসারে হয়, তখন তাকে অভিকর্ষ বৃত্তি বা জিওট্রপিক চলন বলে।

আমরা জানি (ক) উদ্ভিদের মূল সব সময় অভিকর্ষের টানে পৃথিবীর ভরকেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হয়। সেই জন্য মূলকে অভিকর্ষের অনুকূল বর্তী বা পজিটিভ জিওট্রপিক বলা হয়। (খ) কাণ্ড মাটির উপরে পৃথিবীর ভরকেন্দ্রের বিপরীত দিকে বৃদ্ধি পায় , তাই তাই কাণ্ডকে অভিকর্ষ প্রতিকুল বর্তী বা নেগেটিভ জিওট্রপিক বলা হয়। (গ) উদ্ভিদের পার্শ্বীয় মূল পৃথিবীর ভরকেন্দ্রের সঙ্গে লম্বভাবে বৃদ্ধি পায়, তাই উদ্ভিদের পার্শ্বীয় মূলকে তির্যক অভিকর্ষ বর্তী বা ট্রান্সভার্স জিওট্রপিক বলে।

জিওট্রপিক চলনের পরীক্ষা

একটি ভিজে ব্লটিং পেপারের উপরে একটি অঙ্কুরিত চারা গাছকে পিনের সাহায্যে ভূমির সমান্তরাল ভাবে আটকে ব্লটিং পেপারটিকে অন্ধকার স্থানে খাড়াভাবে রেখে দেওয়া হল। কয়েকদিন পরে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে যে ভ্রূণমূলটি নীচের দিকে এবং ভ্রূণমুকুলটি উপরের দিকে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরীক্ষা থেকে প্রমাণিত হয় যে উদ্ভিদের মূলের চলন অভিকর্ষ অনুকূলবর্তী।







৩৷ হাইড্রোট্রপিক চলন ( Hydrotropic Movement )



উদ্ভিদ অঙ্গের চলন যখন জলের উৎসের গতিপথ অনুসারে হয়, তখন তাকে জলবর্তী বা হাইড্রোট্রপিক বলে।

হাইড্রোট্রপিক চলনের পরীক্ষা
একটি চালুনির মধ্যে কিছু ভিজে কাঠের টুকরো রেখে কয়েকটি ছোলা বীজ রাখা হল। কয়েকদিন পর দেখা যাবে যে, বীজ গুলি অঙ্কুরিত হয়েছে এবং ভ্রূণমূল গুলি চালুনির ছিদ্রের মধ্যে দিয়ে চালুনির বাইরে ঝুলে আছে। আরও কয়েকদিন পর লক্ষ্য করা গেল যে, ভ্রূণমূল গুলি পুনরায় বেঁকে চালুনির ছিদ্রের মধ্যে প্রবেশ করছে। এর কারণ কিছুই নয়, ভ্রূণমূল গুলি প্রথমে অভিকর্ষের টানে চালুনির ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে ঝুলছিল। কিন্তু পরে জল পাওয়ার জন্য আবার চালুনির ছিদ্রের মধ্যে প্রবেশ করেছে। এই পরীক্ষা থেকে প্রমানিত হল যে মূলের চলন জল অনুকূলবর্তী।

ন্যাস্টিক চলনের প্রকারভেদ ( Types of Nastic movement )

১৷ ফটোন্যাস্টি ( Photonasty )

আলোর তীব্রতার প্রভাবে যে ন্যাস্টিক চলন হয় , তাকে ফটোন্যাস্টি চলন বলে। পদ্মফুল , সূর্যমুখী ফুল প্রভৃতি তীব্র আলোকে ফোটে আবার কম আলোকে মুদে যায়। তেঁতুল গাছের পত্রক গুলি কম আলোতে মুদে যায়। এগুলি এক রকম ফটোন্যাস্টি চলন।

২৷ থার্মোন্যাস্টি ( Thermonasty )



উষ্ণতার তীব্র প্রভাবে উদ্ভিদ অঙ্গের চলনকে থার্মোন্যাস্টি চলন বলে। টিউলিপ ফুল বেশি উষ্ণতায় ফোটে এবং কম উষ্ণতায় মুদে যায়।
 ৩৷ নিকটিন্যাস্টি ( Nyctinasty )



উদ্ভিদ অঙ্গের ন্যাস্টিক চলন যখন আলো ও উষ্ণতা , এই দুই এর প্রভাবে ঘটে, তখন তাকে নিকটিন্যাস্টি চলন বলে। কোনও কোনও শিম্বী গোত্রীয় উদ্ভিদের পত্রফলক প্রখর রোদ এবং বেশি উষ্ণতায় খুলে যায় এবং রাত্রে কম উষ্ণতায় বন্ধ হয়ে যায়।
৪৷ কেমোন্যাস্টি ( Chemo nasty )

কোনো রাসায়নিক পদার্থের তীব্রতায় সংঘটিত ন্যাস্টিক চলনকে কেমোন্যাস্টি বলে। সূর্যশিশির উদ্ভিদের পাতার রোম প্রোটিনের সংস্পর্শে আসা মাত্র পতঙ্গের দিকে বেঁকে যায় এবং পতঙ্গকে আবদ্ধ করে।

৫৷ সিসমোন্যাস্টি ( Seismo nasty )
স্পর্শ, ঘর্ষণ বা আঘাতের তীব্রতার ফলে যে ন্যাস্টিক চলন হয়, তাকে সিসমোন্যাস্টি চলন বলে। লজ্জাবতী লতার পাতার পাতা স্পর্শ করামাত্র পাতার পত্রকগুলি মুদে যায় বা নুয়ে পড়ে।



প্রাণীদের গমন ( Locomotion of Animals )

প্রাণীদের গমন অঙ্গ সম্পর্কে  সাধারণ ধারণা ( General idea about Locomotory Organ of Animals )

গমনের সময় প্রাণীরা কোনো না কোনো অঙ্গ বা অঙ্গাণু ব্যবহার করে। গমনে সাহায্যকারী অঙ্গকে গমন অঙ্গ বলে। মানুষের হাত ও পা , তিমির প্যাডেল , ব্যাঙের পা , পাখির ডানা , হাঁসের লিপ্ত পদ , শামুকের মাংসল পদ , তারা মাছের টিউব-ফীট , কেঁচোর সিটি , হাইড্রার কর্সিকা  , অ্যামিবার ক্ষনপদ , ইউগ্লিনার ফ্লাজেলা , প্যারামিসিয়ামের সিলিয়া  ইত্যাদি প্রাণীদের বিভিন্ন গমন অঙ্গ। প্রাণীদের গমন অঙ্গের সঙ্গে যুক্ত থাকা বিশেষ ধরনের পেশী।

অমেরুদণ্ডী প্রাণীরা সাধারণত ওই পেশীর গুলির সংকোচন ও প্রসারণ ঘটিয়ে ধীরে ধীরে স্থান পরিবর্তন করে। মেরুদণ্ডী প্রাণীদের অস্থি ও অস্থি সংলগ্ন পেশী গমনে বিশেষ ভুমিকা গ্রহন করে।



বিভিন্ন প্রাণীদের গমন অঙ্গ ও গমন পদ্ধতির নাম

প্রাণীর নাম
গমন অঙ্গ
গমন পদ্ধতি
১৷ অ্যামিবা
১৷ ক্ষনপদ
১৷ অ্যামিবয়েড পদ্ধতি
২৷ ইউগ্লিনা
২৷ ফ্লাজেলা
২৷ ফ্লাজেলার চলন
৩৷ প্যারামিসিয়াম
৩৷ সিলিয়া
৩৷ সিলিয়ারি চলন
৪৷ হাইড্রা
৪৷ কর্সিকা
৪৷ লুপিং ও সমারসল্টিং
৫৷ কেঁচো
৫৷ সিটি
৫৷ ক্রিপিং
৬৷ আরশোলা
৬৷ পা ও ডানা
৬৷ ফ্লাইং ও ওয়াকিং
৭৷ শামুক
৭৷ মাংসল পদ
৭৷ স্লিপিং
৮৷ তারা মাছ
৮৷ নালী পদ
৮৷ লুপিং
৯৷ মাছ
৯৷ পাখনা
৯৷ সন্তরণ
১০৷ ব্যাঙ
১০৷ পা
১০৷ লিপিং, সুইমিং, ক্রলিং
১১৷ টিকটিকি
১১৷ পা
১১৷ ক্রলিং
১২৷ পাখী
১২৷ পা ও ডানা
১২৷ ফ্লাইং, ওয়াকিং
১৩৷ মানুষ
১৩৷ পা ও হাত
১৩৷ ওয়াকিং, রানিং, সুইমিং, ক্রলিং

অ্যামিবার গমন ( Amoeboid movement )

প্রাণীর নাম - অ্যামিবা

গমন অঙ্গের নাম - ক্ষনপদ

গমন পদ্ধতির নাম – অ্যামিবয়েড গমন

গমন পদ্ধতি

১৷ ক্ষনপদ হল অ্যামিবার কোষ পর্দা সমূহ দেহ প্রোটোপ্লাজমের অংশ বিশেষ যা নলাকারে প্রসারিত হয়।


২৷ গমনের সময় ক্ষনপদ সামনের দিকে প্রসারিত হয় এবং কোনো কঠিন বস্তুর সঙ্গে ক্ষনপদটিকে দৃঢ় ভাবে আবদ্ধ করে।

৩৷ এর পর পিছনের প্রোটোপ্লাজম দেহে সংকোচিত হয়ে ধীরে ধীরে ঢুকে যায়।

৪৷ ক্ষনপদ গুলি অস্থায়ী মুহূর্তে বিস্মৃত হয়ে অল্পক্ষণ পরে দেহে মিলিয়ে যায়।

৫৷ এইভাবে পর্যায়ক্রমে ক্ষনপদ সৃষ্টি ও অবলুপ্তির মাধ্যমে অ্যামিবা ধীরে ধীরে গন্তব্যস্থলে এগিয়ে যায়।


মাছের গমন ( Locomotion of fish )

প্রাণীর নাম – মাছ

গমন অঙ্গের নাম – পাখনা

গমন পদ্ধতির নাম - সন্তরণ

গমন পদ্ধতি



১৷ মাছের সাতটি পাখনা আছে। একটি পৃষ্ঠপাখনা, একটি পায়ুপাখনা, একটি পুচ্ছপাখনা এবং একজোড়া করে বক্ষ ও শ্রোণী পাখনা।

২৷ বক্ষপাখনার সাহায্যে মাছ জলের গভীরে যেতে পারে এবং শ্রোণীপাখনার সাহায্যে মাছ জলে ভাসতে পারে। পুচ্ছপাখনার সাহায্যে মাছ জলের দিক পরিবর্তন করতে পারে। পৃষ্ঠ ও পায়ু পাখনা সন্তরণের সময় মাছের ভারসাম্য রক্ষা করে।

৩৷ মাছের দেহটি মাকুরের মত হওয়ায় এরা সহজেই জলের বাধা অতিক্রম করতে পারে।

৪৷ মাছের মেরুদণ্ডটি নমনীয় এবং মেরুদণ্ডের দু পাশে  ' V ' আকৃতি বিশিষ্ট মায়োটোম পেশী থাকায় এরা ওই পেশীর সংকোচন ঘটিয়ে দেহটিকে তরঙ্গের মত একবার ডানপাশে , একবার বামপাশে এবং পর্যায়ক্রমে আন্দোলিত করে সামনের দিকে দ্রুত অগ্রসর হয়।


মানুষের গমন পদ্ধতি ( Locomotion of Human body )

প্রাণীর নাম - মানুষ

গমন অঙ্গের নাম - অস্থি, পেশী, অস্থি সন্ধি

গমন পদ্ধতির নাম - দ্বিপদ গমন

মানুষের গমনে সহায়ক অস্থি সমূহ - মানব দেহে মোট ২০৬ টি অস্থি থাকে। মানব অস্থি তন্ত্রের মত মেরুদণ্ড, শ্রোণীচক্র ও পায়ের অস্থি গুলি গমনে সাহায্য করে।

১৷ মেরুদণ্ড – কশেরুকার দ্বারা গঠটি ঋজু অস্থি অক্ষ কে মেরুদণ্ড বলে। মেরুদণ্ডে কশেরুকারের সংখ্যা ৩৩ টি।

২৷ শ্রোণীচক্র – সংখ্যা 1×2=21×2=2 । মানব দেহের প্রধান গমন অঙ্গ পদ শ্রোণীচক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকে।

৩৷ পায়ের অস্থি –

ফিমার ( Femur ) -  1×2=21×2=2
টিবিয়া ( Tibia ) , ফিবিউলা ( Fibula ) -  2×2=22×2=2
টারসাল ( Tarsal ) -  7×2=147×2=14
মেটাটার্সাস ( Metatarsus ) -  5×2=105×2=10
ফ্যারেঞ্জেরস ( Phalanges ) - 14×2=2814×2=28


মানুষের গমনে সহায়ক অস্থি সন্ধি সমূহ - ছয় প্রকার অস্থি সন্ধি দ্বিপদ গমনের সাথে সংশ্লিষ্ট

১৷ স্কন্ধের সন্ধি, ২৷ কব্জির সন্ধি, ৩৷ কনুই ও হাঁটুর সন্ধি, ৪৷ অ্যাম্বুলার সন্ধি, ৫৷ কব্জি ও গোড়ালির সন্ধি, ৬৷ করটি ও মেরুদণ্ডের সন্ধি

মানুষের গমনে সহায়ক পেশী - অস্থি ও অস্থি সন্ধির সঙ্গে যুক্ত থাকে পেশী। এই পেশী গুলির সংকোচন ও প্রসারনে অস্থি ও অস্থি সন্ধির সঞ্চালন ঘটে এর ফলে মানুষের গমন ক্রিয়া সংগঠন হয়।



১৷ ফ্লেক্সর পেশী – যে সমস্ত পেশী দুটি অস্থি কে ভাঁজ হতে বা কাছাকাছি আনতে সাহায্য করে, তাদের ফ্লেক্সর পেশী বলে। উদাহরণ – বাইসেপস পেশী ( Biceps muscle)

২৷ এক্সটেনসর পেশী – যে সমস্ত পেশী দুটি অস্থি খণ্ডকে প্রসারিত হতে সাহায্য করে, তাদের এক্সটেনসর পেশী বলে। উদাহরণ – ট্রাইসেপস পেশী ( Triceps muscle )

৩৷ অ্যাডাকটর পেশী – যে সমস্ত পেশী কোনো অংশকে দেহ অক্ষের কাছাকাছি আনে তাদের অ্যাডাকটর পেশী বলে। উদাহরণ – ল্যাটিসিমাস ডরসি ( Latissimus dorsi )

৪৷ যে সমস্ত পেশী কোনো অঙ্গকে দেহ অক্ষ থেকে দূরে সরায়, তাদের পেশী বলে। উদাহরণ – ডেল্টয়েড পেশী ( Deltoid Muscle)



দ্বিপদ গমন ক্রিয়া



১৷ মানুষের দ্বিপদ গমনে বাম পা ও ডান হাত এবং ডান পা ও বাম হাত একত্রে অগ্রসর হয়। এর ফলে গমন কালে দেহের ভারসাম্য রক্ষিত হয়।

২৷ গমনকালে পা তোলার পূর্বে প্রথমে গোড়ালি উপরের দিকে ওঠে এবং হাঁটু ভাঁজ হয়।

৩৷ তারপর ওই পদ মাটি থেকে উঠে সামনের দিকে এগিয়ে স্থাপিত হয়।

৪৷ এই সময় দেহের ভার রক্ষা করে।

বাঁ পা আগের পদ্ধতিতে স্থানান্তরিত হয়ে স্থাপিত হলে তারপর ডান পা একই পদ্ধতিতে ভাঁজ হয়।









No comments:

Post a Comment